নমস্কার বন্ধুরা। সকলে কেমন আছেন? আজকে চলে এসেছি আপনাদের সাথে আমার জীবনের একটি বিশেষ দিনের মুহূর্তগুলো শেয়ার করার জন্য। আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে।
দিনটি ছিল ১১ই ডিসেম্বর, ২০২২। দিনটিকে বিশেষ বলার দুটি কারণ ছিল। প্রথম কারণটি দিয়েই শুরু করি। আসলে সেই দিন ছিল আমার জীবনের একটি বিশেষ পরীক্ষা। ২০১৭ সালের পরে ২০২২ সালে TET (Teacher Eligibility Test) পরীক্ষা হয়। যারা নিয়মিত আমার পোস্ট পড়েন, তারা জানেন আমি আমাদের রাজ্যের প্রাইমারি স্কুলের টিচিং প্রফেশনের জন্য একটি কোর্স করছি , যার নাম D.El.Ed(Deploma in Elementary Education)। তাই এই পরীক্ষাটা আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে পরীক্ষার নোটিফিকেশন বেরিয়েছিল অনেক দেরি করে এবং নোটিফিকেশন এর পর খুব দ্রুতই ফর্ম ফিলাপ শুরু হয়ে যায়। এরপর প্রস্তুতির জন্য হাতে মোটে দুই মাস সময় পেয়েছিলাম।
তখনো কিন্তু আমি ডি.এল.এড কোর্সে ভর্তি হইনি।এই পরীক্ষার আগেই যেহেতু আমার বি.এড এর কোর্স কমপ্লিট হয়েছিল, সেই সমস্ত সার্টিফিকেট দিয়েই আমার ফর্ম ফিলাপ হয়েছিল। তবে ২০১৭ সালের আগে শুধুমাত্র D.El.Ed কোর্স যাদের কমপ্লিট ছিল বা যারা কোর্সটি করছিল তারাই এই পরীক্ষায় বসার জন্য যোগ্য প্রার্থী ছিল। তবে ২০১৭ সাল থেকে নিয়ম হয়েছিল যে, ডি.এল.এড এর পাশাপাশি বি.এড এর শিক্ষার্থীরাও এই পরীক্ষায় বসার জন্য যোগ্য। তবে সমস্যা হয়েছিল কি জানেন। এই পরীক্ষার বেশিরভাগ প্রশ্নই আসে ডি.এল.এড কোর্স রিলেটেড। তাছাড়া যেটুকু পার্ট বি.এড এ পড়ার কথা, করোনার সময় কোর্সটিতে ভর্তি হওয়ার ফলে পড়াশোনায় অনেক ঘাটতি থেকে গিয়েছিল। যেটা উপলব্ধি করেছিলাম এই পরীক্ষাটা দেওয়ার সময়। তাই হাতে যে মাত্র দুই মাস সময় পেয়েছিলাম সেটাকে সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগিয়েছিলাম। নিজের প্রতিদিনের ব্যস্ত সিডিউলের বাইরে গিয়ে পড়াটাকে আত্মস্থ করে নিয়েছিলাম। দুই মাসেই পুরো সিলেবাস সম্পন্ন করে ফেলেছিলাম, কারণ পরীক্ষাটাই আমাকে পাশ করতেই হতো।
সত্যি কথা বলছি, পরীক্ষাটাই পাস করার জন্য অনেক খেটেছিলাম। সম্ভাব্য যা যা বই দুই মাসের পড়ার কথা সব কিনে ফেলেছিলাম। সেই সাথে সেগুলো পড়েও ছিলাম। যেখানেই যেতাম সঙ্গে করে বই নিয়ে যেতাম, স্টুডেন্টদের পড়াতে পড়াতে নিজের পড়াগুলো সেরে ফেলতাম। স্টুডেন্টদের পড়িয়ে সেখান থেকে সোজা চলে যেতাম কোচিং এ। খুব খেটেছিলাম। তবে প্রচন্ড চাপ নিয়ে ফেলেছিলাম। সব সময় মাথায় ঘুরতো যেন তেন প্রকারে পাশ আমাকে করতেই হবে। কারণ আমরা অনেকেই একসঙ্গে প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম। তাই তাদের মধ্যে যদি আমি ফেল করে যাই তাহলে নিজের জন্য বড্ড কষ্ট হবে। এই প্রিপারেশনের মাঝেই আমার ভীষণ জ্বর এসেছিল। এক সপ্তাহ ধরে সেই জ্বর ছিল। তবে এই এক সপ্তাহ পড়াশুনা না করলে আমি অনেকটাই পিছিয়ে পড়বো এই ভেবে শুয়ে শুয়েই পড়তাম। পড়া থামাইনি। একমাস সেই কোচিংয়ে গিয়েছিলাম। কারণ যেহেতু পরীক্ষার ধরন বা প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে আমি খুব একটা বেশি ওয়াকিবহাল ছিলাম না তাই একটা গাইডেন্সের খুব প্রয়োজন ছিল। এরপর যখন একটু বুঝতে পারি তখন ভাবলাম হাতে যেহেতু সময় কম রয়েছে তাই বাড়িতেই পড়াশোনা শুরু করি। তাই বাকি এক মাস নিজে প্রিপারেশন নিয়েছিলাম।
এই দুই মাসের মধ্যেই আবার সমস্ত পুজোগুলো পড়েছিল। বাঙালিদের পুজো অক্টোবর ,নভেম্বরেই পড়ে। দুর্গা পুজো, লক্ষ্মীপূজো, কালীপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো ইত্যাদি বিখ্যাত পুজো গুলো সবই এই সময়কালে পড়ে। তবে সেই বছর আমি কোন জামাকাপড় কিনিনি, কোথাও ঘুরতেও যাইনি। সেই পুজোটা পুরোপুরি স্যাক্রিফাইস করেছিলাম। হ্যাঁ, শুধুমাত্র দুর্গা পুজোয় অষ্টমীর দিন মায়ের কাছে অঞ্জলি দিতে গিয়েছিলাম, তাও খুব সাদামাটা ভাবে। তাছাড়া আর কোনো পুজোয় বেরোইনি। বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন এসেছে, তারা ঘুরতে বেরিয়েছে কিন্তু আমি বেরোইনি। এই ভাবেই আমি প্রস্তুতি চালিয়ে গিয়েছি।
পুরো ব্লগ জুড়ে আজকে আমি নিজের প্রশংসাই করে গেলাম। তবে সত্যি কথা বলতে গেলে, আমি কিন্তু সত্যি সত্যিই সমস্ত কিছু সেক্রিফাইস করে এই পরীক্ষাটার ওপরেই ফোকাস করেছিলাম। তাই মাঝে মাঝে নিজের প্রশংসাও করা দরকার। গোটা দুই মাস একনিষ্ঠতার সাথে প্রিপারেশন নিয়েছিলাম। তারপর দেখতে দেখতে ১১ই ডিসেম্বর চলে এলো। যেহেতু বেশ কয়েক বছর পর পরীক্ষাটা হচ্ছিল তাই ক্যান্ডিডেট সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। যার ফলে ট্রেনে বাসে ভিড় হবে এটাই স্বাভাবিক ছিল। তাই বারোটার সময় পরীক্ষা শুরু হবে জেনেও, ট্রেনের ভিড় এড়াতে আমরা ঠিক করেছিলাম সকাল সকাল সেখানে পৌঁছে যাব। সেই মতো ১১ই ডিসেম্বর আমরা সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েছিলাম।
এরপর কি হয়েছিল? সেটা জানতে হলে আপনাদের অবশ্যই আমার পরবর্তী পোস্টটি পড়তে হবে। আজ এখানেই শেষ করছি। আগামীকাল অবশ্যই পরবর্তী পর্ব নিয়ে হাজির হব। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।