![]() |
---|
আমার বাংলা ব্লগের সবাইকে শুভেচ্ছা, আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি। আজকে আমি একটি নতুন জীবনের ভাবনা নিয়ে হাজির হয়েছি। অনেক সময় শৈশবের ছোট ছোট না-পাওয়াগুলো আমাদের মনে এমনভাবে গেঁথে থাকে, যেগুলো আমরা অনেক বড় হয়ে বুঝতে পারি, যখন কিছুটা নিজের সামর্থ্য তৈরি হয় । তখন আমরা চাই সেই অপূর্ণতার জবাব দিতে।
আজকের এই লেখায় আমি ঠিক তেমন কিছু অনুভূতির কথা ভাগ করে নিয়েছি—না-পাওয়ার বেদনাকে উপভোগ করার গল্প। আশাকরি আপনাদের হৃদয়ের কোথাও না কোথাও ছুঁয়ে যাবে এই গল্পটি।
ছোটবেলায় গুড় খেতে খুব ইচ্ছা করত। আম্মা খেতে দিত না বেশি। বাজার থেকে অল্প একটু গুড় এনে রান্নাঘরের এক কোণে একটা ছোট্ট কাচের পাত্রে লুকিয়ে রাখতেন। সেই পাত্রের ঢাকনা শুধু খোলার অনুমতি ছিল তখনই, যখন পিঠা বানানোর সময় হতো। তখন আম্মার হাত থেকে যদি একচিমটি গুড়ও পাওয়া যেত, সেই স্বাদে মনে হতো—আমি বুঝি রাজা! তৃপ্তির চাইতে না পাওয়ার খিদেটাই তখন বড় ছিল।
যখন নিজে উপার্জন করতে শুরু করলাম, তখন হুট করেই মনে আসলো আমি তো চাইলে এখন গুড় কিনে খেতে পারি। একদিন সত্যিই কিনে ফেললাম গুড়। সেই না পাওয়া গুড় এখন আমার হাতের কাছেই। চায়ের সাথে খাই, পিঠার সাথে খাই, এমনকি মাঝে মাঝে শুধু চিবিয়ে চিবিয়েও খাই। তবে সত্যি বলতে, সেই এক চিমটির মতো স্বাদ আর কখনও পাওয়া গেল না। তবু মনে হয়, শৈশবের সেই না-পাওয়ার সাথে এই পাওয়ার খেলাটা একধরনের প্রতিশোধ। হয়তো মিষ্টির স্বাদ নয়, মনের ক্ষুধাটাই মিটিয়ে নিচ্ছি।
আরেকদিন এক সুপারশপে হঠাৎ চোখে পড়ল অরেঞ্জ জ্যেলি।
ছোটবেলায় টিভিতে একটা বিজ্ঞাপন দেখতাম—একটা বাচ্চা পাউরুটিতে অরেঞ্জ জ্যেলি মেখে খাচ্ছে। তখন মনে হতো এটির স্বাদ মনে হয় অনেক বেশি, অনেক বেশি বলতে আমি যা কখনোই খাইনি তেমন বেশি। কিন্তু আমাদের মধ্যবিত্ত সংসারে অরেঞ্জ জ্যেলির জায়গা ছিল না। তখন মনে হতো এটি কেবল বড়লোকদের খাবার।
সেই সুপারশপে দাঁড়িয়ে ভাবলাম, এখন তো কারও উপর নির্ভর করতে হয় না।এক কৌটা অরেঞ্জ জ্যালি কিনে আনলাম। ঘরে ফিরে পাউরুটির দরকার পড়ল না, আঙুল ডুবিয়ে জ্যেলিটা খেয়ে নিলাম। সেই পুরনো না-পাওয়ার এক বিন্দু হিসেব মিটিয়ে দিলাম নিজের মতো করে।
আমার এক সহকর্মী আছে, যার অবস্থা ‘তেল আনতে নুন ফুরায়’ এমন অবস্থা। একদিন দেখি হঠাৎ পুরো পরিবার নিয়ে কক্সবাজার যাচ্ছে—তাও বিমানে! পরিবারের সাথে বিমানে সমদ্র সৈকত যাওয়া তার জন্য কখনোই সম্ভব না। অফিসে সবাই ফিসফিস করছে, কেউ কেউ চোখ কুঁচকে তাকাচ্ছে।
আমি এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
—“ভাই, কীসের উৎসব?”
সে একটু হেসে বলল,
—“আব্বা জীবনে বলত ক্লাসে রোল ১ পেলে কক্সবাজার ঘুরতে নিয়ে যাবে। আমি সবসময় রোল ১-ই হইতাম, কিন্তু শিক্ষক আব্বার সাধ্য ছিল না কক্সবাজারের আশা পূর্ণ করার। এখন আমার ছেলেও রোল ১ হইছে। আমি চাই না, ওর স্মৃতিতে আমার মত কোনো অপূর্ণতা থাকুক।”
এই কথাগুলো শুনে বুক কেমন যেন হু হু করে উঠল। জীবনটা খুবই ছোট। সকালে উঠে বিকেল হয়ে যায়, চোখের পলকে দিন যায়, বছর চলে যায়। সবসময় ভাবি, সময় হলে করব—সময় কি কারও জন্য দাঁড়িয়ে থাকে? টাকা জমাচ্ছি, প্ল্যান করছি, কিন্তু সেই “সঠিক সময়”টা আর আসে না।
সময়, টাকা আর অবসর—এই তিনজন যেন তিন ভিন্ন ট্রেনের যাত্রী, যারা একসাথে কোনো প্ল্যাটফর্মে নামে না। আজকের যা আনন্দ, তা আজকেই নিতে হয়। আজ যদি না হাসলেন, কাল সেই হাসি আর ফিরবে না। আজ যদি বউয়ের হাত ধরে একটু হেঁটে না এলেন, ভবিষ্যতে সময় পেলেও হয়তো হাঁটতে পারবেন না। জীবনকে এতটা হিসেব করে বাঁচলে কেবল ক্যালকুলেটর খুশি হয়, আপনি না।
জীবনটা আসলে গুড়ের মতো—একটু একটু করে চিবিয়ে নিতে হয়, উপভোগ করতে হয়। অরেঞ্জ জ্যেলির মতো মজা নিয়ে খেতে হয়, তৃপ্তির দাগ যেন ঠোঁটে লেগে থাকে। না-পাওয়ার হিসেব রেখে জীবন চললে শেষে শুধু আফসোস জমে। যেটুকু পেয়েছেন, সেটুকুই বড়—আর সেটুকুকেই ভালোবেসে, চেটেপুটে খেয়ে ফেলার নামই তো জীবন।
আমার আজকের লিখাটি এখানেই শেষ করছি। আগামীতে আবারও আসবো নতুন কোনো গল্প বা কবিতা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেজ। |
---|
আমার পুরোনাম জোনায়েদ আহমদ । স্টিমিট আইডি @junaidahmed।
বাসা নেত্রকোনা সদর নেত্রকোনা । আমি অর্থনীতি বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি, বর্তমানে জবের পড়াশোনার পাশাপাশি স্টিমিট এ লিখালিখি করি। আমার প্রকৃতির ছবি তুলতে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে,বিশেষ করে ফুলের ছবি,সূর্যের অস্ত যাওয়ার ছবি,চাঁদের ছবি আর সাদাকালো বিভিন্ন ছবি।বিভিন্ন বিষয়ে গল্প লিখতেও ভালো লাগে। হলের বারান্দায় আমার কিছু গাছ আছে এগুলোর সাথে মাঝে মাঝে সময় কাটাই। আমি স্টিমিটে জয়েন করি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। আমার এই স্বল্প সময়ে আমার বাংলা ব্লগে ক্যারিয়ার শুরু করতে পেরে খুবই আনন্দিত অনুভব করছি। আপনাদের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়ে খুব ভালো লাগছে।



250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness

OR
কমেন্ট টাস্কঃ
https://x.com/Junaid_2208/status/1939737529164734823
https://x.com/Junaid_2208/status/1939736825041756653
https://x.com/Junaid_2208/status/1939736336946356528
https://x.com/Junaid_2208/status/1939736015805309286
https://x.com/Junaid_2208/status/1939735661252313496
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit
Thank you for sharing on steem! I'm witness fuli, and I've given you a free upvote. If you'd like to support me, please consider voting at https://steemitwallet.com/~witnesses 🌟
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit