আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন সবাই ? আশা করি আপনারা সবাই বেশ ভালো আছেন। চলে গেল ঈদ। সেই সাথে চলে গেল পবিত্র রমজান মাস। আবার এক বছর পর আমরা ফিরে পাবো এই রমজান মাস। জানিনা কে কতটুকু নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নিতে পেরেছি। যাই হোক প্রতিদিনের মত করে আজও চলে আসলাম আপনাদের মাঝে আমার আরও কিছু ফটোগ্রাফি শেয়ার করার জন্য। আসলে চলতে ফিরতে এত এত ফটোগ্রাফি করেছি যে প্রতিটি ফটোগ্রাফি আমার মোবাইলে জমে একেবারে মোবাইল কে হ্যাংঙ করে দিয়েছে। এই ফটোগ্রাফি করে শেষ হবে কে জানে। আমার কাছে ফটোগ্রাফি করা একটি আর্ট। আর সেই ফটোগ্রাফি যদি করা যায় মনের মনের মাধুরী মিশিয়ে তাহলে কিন্তু ফটোগ্রাফি হয়ে উঠে বেশ আকর্ষনীয় এবং দৃষ্টিনন্দন। অবশ্য সবার পক্ষে সুন্দর সুন্দর ফটোগ্রাফি করা হয়ে উঠে না। তবে আমরা যদি ক্যামেরার লেন্স এবং ফোকাস বুঝে একটু সময় নিয়ে ফটোগ্রাফি করতে পারি তাহলে কিন্তু আমরাও একজন দক্ষ ফটোগ্রাফার হতে পারবো। আর নিজেদের দক্ষতাকে সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলতে পারবো। তাই আমাদের উচিত হবে সুন্দর এই শিল্পটিকে সুন্দর করে শিখে নেওয়া।

![4b694326-9cff-4add-913c-61f77cb3bdbc.png](https://cdn.steemitimages.com/DQmUve7QPzkQTZjZAZTovMK6ipAKKJeeeaRro9x1eu5rgR8/4b694326-9cff-4add-913c-61f77cb3bdbc.png) বেশ কিছুদিন আগে একটি মনোজ্ঞ অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়েছিলাম—বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর পরিদর্শন। ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত এই জাদুঘর আমাদের দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক সম্পদের অন্যতম ধারক। প্রতিবার জাদুঘরে গেলেই কিছু না কিছু নতুন শিখি, আবিষ্কার করি কিংবা বিস্ময়ে অভিভূত হই। তবে এবারের অভিজ্ঞতাটি ছিল একটু ভিন্ন। এই ভিন্নতা এসেছে জাদুঘরের একটি গ্যালারীতে রাখা কিছু সাধারণ অথচ আমাদের জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু পছন্দের ফল থেকে। আমরা প্রতিদিন হয়তো কলা খাই, ডাবের পানি পান করি, অথবা সুপারি চিবিয়ে মুখ রাঙাই। কিন্তু কখনো কি গভীরভাবে ভেবেছি—এই ফলগুলো শুধু খাবার নয়, আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়েরও অংশ? সেদিন জাদুঘরের গ্যালারীতে কাঠাল, ডাব, সুপারি, কলা, কটবেল আর পাঁকা পেঁপে দেখে আমি অভিভূত হয়ে পড়লাম। এই ফলগুলোর উপস্থিতি যেন এক কথায় আমাদের মাটির গন্ধ, গ্রাম-বাংলার দৃশ্য, এবং শিকড়ের টানকে মনে করিয়ে দিল। ![WhatsApp Image 2025-06-30 at 12.56.41_7e41393c.jpg](https://cdn.steemitimages.com/DQmZchHvU65sH8tn87YK2oPoszUXAANUfzm2eVS9NXALr6N/WhatsApp%20Image%202025-06-30%20at%2012.56.41_7e41393c.jpg) প্রদর্শনীতে সবচেয়ে বড় জায়গাটি যেন দখল করেছিল কাঠাল। আমাদের জাতীয় ফল হিসেবে কাঠালের গুরুত্ব অপরিসীম। জাদুঘরে কাঠালের একটি বড় মডেল ছিল, সাথে ছিল ফলটির বিবরণ ও ব্যবহার। গ্রীষ্মকালীন এই ফলটি যেমন পুষ্টিগুণে ভরপুর, তেমনি বাংলার ঘরে ঘরে এটি এক আদরের অতিথি। ছোটবেলায় কাঠাল খেতে খেতে যে আনন্দ পেতাম, সেই স্মৃতি যেন ফিরে এলো। কাঠালের গন্ধে ভরপুর গাছতলা, আর সেই গাছ থেকে পাড়া ফল খাওয়ার অভিজ্ঞতা অনেকেরই জীবনের অংশ। জাদুঘরে কাঠালের প্রদর্শনীতে উঠে এসেছিল এর বাণিজ্যিক গুরুত্বও। বিভিন্ন ধরনের কাঠাল, যেমন কাঁঠালি, রসালো, কাঁচা ও পাকা কাঠালের বৈশিষ্ট্য ছিল সেখানে তুলে ধরা। এতে বোঝা যায়, কেবল স্বাদ বা পুষ্টির দিক থেকেই নয়, কাঠাল আমাদের কৃষি অর্থনীতির সাথেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ![WhatsApp Image 2025-06-30 at 12.56.42_0f3ecb71.jpg](https://cdn.steemitimages.com/DQmPnj2Eq2pdpqHtXMiSt4VMhouLpnxg2LB9W2cAHZUhiCo/WhatsApp%20Image%202025-06-30%20at%2012.56.42_0f3ecb71.jpg) তাল, আমাদের দেশের এক প্রাচীন ও উপকারী ফল। গ্রীষ্মকালে এর উপস্থিতি বাংলার গ্রামীণ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। পাকা তাল দিয়ে তৈরি হয় তালপিঠা, তালের বড়া, তালের খই—যা আমাদের ঐতিহ্যের পরিচায়ক। এর মিষ্টি রস গরম ভাতে মেখে খাওয়া এক অদ্বিতীয় স্বাদ। তালগাছ শুধু ফলই দেয় না, দেয় ছায়া, কাঠ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। জাদুঘরের গ্যালারীতে তালের একটি বড়সড় নিখুঁত মডেল রাখা ছিল, যা দেখে এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো—আসল তালই বুঝি সামনে রাখা! ![WhatsApp Image 2025-06-30 at 12.56.41_292dfd39.jpg](https://cdn.steemitimages.com/DQmfZvs4UumoAe3xvwknZWRXxYL5HMmgbM7TKGqpnpYCgn3/WhatsApp%20Image%202025-06-30%20at%2012.56.41_292dfd39.jpg) সুপারি হয়তো আমাদের প্রতিদিনের খাবার তালিকায় নেই, কিন্তু এটি আমাদের আচার-অনুষ্ঠান, অতিথি আপ্যায়ন, এমনকি বিয়ের রীতি পর্যন্ত গভীরভাবে জড়িত। জাদুঘরে রাখা ছিল একগুচ্ছ পাকা ও কাঁচা সুপারির সংগ্রহ, সাথে ছিল গাছের ডালসহ একটি ঝুলন্ত সুপারি থোকা—দর্শনার্থীদের বোঝাতে যে এটি কেমনভাবে গাছে ধরে। জাদুঘরের একটি বোর্ডে উল্লেখ ছিল, কীভাবে সুপারির ব্যবহার বাংলার সামাজিক ব্যবস্থার অংশ। গ্রামের বিয়েতে বরযাত্রী এলে পান-সুপারি দিয়ে তাদের স্বাগত জানানো হয়, আবার কোনো ধর্মীয় বা পারিবারিক অনুষ্ঠানে এটি থাকে এক অবিচ্ছেদ্য উপাদান। এমনকি সুপারির কাঠ দিয়ে তৈরি জিনিসপত্রও একসময় ব্যবহার করা হতো। ![WhatsApp Image 2025-06-30 at 12.56.46_2f9720fa.jpg](https://cdn.steemitimages.com/DQmVhCVvtXunpwKmWWZEQDWaw3K9euRUANVs2ayrDa25y9f/WhatsApp%20Image%202025-06-30%20at%2012.56.46_2f9720fa.jpg) কলা বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ফল। এটি একাধারে পুষ্টিকর, সস্তা ও সহজলভ্য। জাদুঘরে কলার বেশ কিছু জাত তুলে ধরা হয়েছিল—সাগর, চাঁপা, আমরোপালি ইত্যাদি। একটি কলার থোকার আদলে তৈরি মডেল ও সত্যিকারের শুকনো কলা পাতা এবং কাণ্ড দিয়ে সাজানো ছিল প্রদর্শনীটি। জাদুঘরে কলা নিয়ে যে অংশটি আমাকে সবচেয়ে বেশি নাড়া দিয়েছে, তা হলো পূজা-পার্বণে কলার ব্যবহার। বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজায় কলার গাছ বাঁধা হয়, দেবতার সামনে রাখা হয় কলার থোকা। এছাড়া কলা পাতায় পরিবেশন করা হয় খাবার, যা এখন অনেক জায়গায় আবার ফিরে আসছে পরিবেশবান্ধব হিসেবে। ![WhatsApp Image 2025-06-30 at 12.56.43_a9847712.jpg](https://cdn.steemitimages.com/DQmQw83yJtEGdHQNry9ZPXsX4qRAXwcEcEf1y25nUEpQGKi/WhatsApp%20Image%202025-06-30%20at%2012.56.43_a9847712.jpg) কটবেল এক প্রকার দুর্লভ কিন্তু অতি উপকারী ফল। ছোটবেলায় অনেকেই বেল ভেঙে খাওয়ার অভিজ্ঞতা রাখেন। জাদুঘরে একটি পাকা কটবেল রাখা ছিল, যার উপর কিছু চিরুনি দাগ করে কেটে বোঝানো হয়েছিল এর ভেতরের গঠন। সেই সাথে ছিল কটবেলের গাছের ছবি ও ইতিহাস। এই ফলটির ভেষজ গুণাগুণ আমাদের পূর্বপুরুষরা জানতেন। এখন তো আধুনিক গবেষণাও বলছে—কটবেল হজমে সহায়ক, এবং এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। জাদুঘরের বিবরণীতে লেখা ছিল কিভাবে কটবেল দিয়ে শরবত, জেলি বা আচার তৈরি করা হয় এবং কীভাবে এটি আজ বিলুপ্তির পথে। ![WhatsApp Image 2025-06-30 at 12.56.46_d8baf950.jpg](https://cdn.steemitimages.com/DQmYKgdcNL6Bn2wgXmSR94tUKU43ViLcHnrMgDcR3sz62fE/WhatsApp%20Image%202025-06-30%20at%2012.56.46_d8baf950.jpg) আনারস একটি রসালো, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। গ্রীষ্মকালে এর টক-মিষ্টি স্বাদ আমাদের তৃষ্ণা মেটায় ও প্রশান্তি দেয়। আনারসে রয়েছে ভিটামিন ‘সি’, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এর রস দিয়ে তৈরি হয় জুস, আচার, জ্যাম এবং বিভিন্ন মিষ্টান্ন। শুধু স্বাদেই নয়, এর ঘ্রাণও মন জুড়িয়ে দেয়। ঠান্ডা আনারস খেলে গরমে আরাম পাওয়া যায়। জাদুঘরের ঐ অংশে এই ফলটির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার কথাও তুলে ধরা হয়েছিল। ![WhatsApp Image 2025-06-30 at 12.56.40_8a8a79c3.jpg](https://cdn.steemitimages.com/DQmUUAdYNfy2uHXnmmpJqZtV2hyHzKvVYNkbLNiqNwTBB7e/WhatsApp%20Image%202025-06-30%20at%2012.56.40_8a8a79c3.jpg) সবশেষে ছিল পাকা পেঁপে। একসময় এটি গ্রামের ফল মনে করা হতো, কিন্তু আজ শহরবাসীর ডায়েট চার্টেও এর উপস্থিতি অবধারিত। জাদুঘরে রাখা পেঁপেটি ছিল অর্ধেক কাটা, যাতে ভেতরের লালচে অংশ আর বীজগুলি দেখা যায়। একটি ব্যানারে ছিল—“পেঁপে: প্রাকৃতিক হজম শক্তি ও রোগ প্রতিরোধক ফল।” পেঁপে কেবল খাওয়ার জন্য নয়, ঔষধি গুণেও সমৃদ্ধ। শিশুদের ও বৃদ্ধদের জন্য এটি অত্যন্ত উপযোগী। এছাড়া আধুনিক কৃষি পদ্ধতিতে পেঁপে চাষ বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি করছে। জাদুঘরের ঐ অংশে এই ফলটির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার কথাও তুলে ধরা হয়েছিল। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের গ্যালারীতে ফলের এই প্রদর্শনী দেখে আমি অনুধাবন করলাম—আমাদের পরিচিত এই ফলগুলো শুধুই খাদ্য নয়, বরং প্রতিটির পেছনে রয়েছে একেকটি গল্প, একেকটি ইতিহাস, একেকটি সংস্কৃতি। আমাদের জাতীয় পরিচয়, গ্রামীণ জীবন, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, চিকিৎসা জ্ঞান, অর্থনীতি—সবকিছুর সাথেই এই ফলগুলো গভীরভাবে জড়িত। এই অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। জাদুঘর মানেই কেবল প্রাচীন নিদর্শন দেখা নয়, বরং সেগুলোর ভেতর দিয়ে নিজেকে, নিজের শেকড়কে খুঁজে পাওয়া। বাংলার প্রতিটি ফল যেন সেই শেকড়েরই এক একটি চিহ্ন। আর জাদুঘরের এ আয়োজন ছিল সেই চিহ্নগুলোকে সম্মান জানানোর এক অনন্য প্রয়াস।

জানিনা আমার আজকের ফটোগ্রাফি গুলো আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে। আমার কাছে কিন্তু প্রতিটি ফটোগ্রাফি বেশ ভালো লেগেছে। আপনাদের মতামতের অপেক্ষায় রইলাম।

পোস্ট বিবরণ

শ্রেণী | ফটোগ্রাফি ------------ | ------------- ক্যামেরা | Vivo y18 পোস্ট তৈরি | @maksudakawsar লোকেশন | ঢাকা , বাংলাদেশ|

আমার পরিচিতি

আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে। [ ![3W72119s5BjVs3Hye1oHX44R9EcpQD5C9xXzj68nJaq3CeF5StuMqDPqgYjRhUxqFbXTvH2r2mDgNbWweA4YGBo825oLh4oqEqeynn5EZL11LdCrppngkM (1).gif](https://cdn.steemitimages.com/DQmW8FXcfJENDdMBWZnr8CtLVbkPkY9BuaPkYpReY3n1wwH/3W72119s5BjVs3Hye1oHX44R9EcpQD5C9xXzj68nJaq3CeF5StuMqDPqgYjRhUxqFbXTvH2r2mDgNbWweA4YGBo825oLh4oqEqeynn5EZL11LdCrppngkM%20(1).gif) ](https://steemit.com/trending/hive-129948)

VOTE @bangla.witness as witness ![witness_vote.png](https://cdn.steemitimages.com/DQmW8HnxaSZVKBJJ9fRD93ELcrH8wXJ4AMNPhrke3iAj5dX/witness_vote.png) OR SET @rme as your proxy ![witness_proxy_vote.png](https://cdn.steemitimages.com/DQmRXkkCEbXLYwhPEYqkaUbwhy4FaqarQVhnzkh1Awp3GRw/witness_proxy_vote.png) ![1000206266.png](https://cdn.steemitimages.com/DQmam5KTDRKX4aDt1FA9FfVjBriLY8BJqwqrPiVuSKegVAB/1000206266.png) ![1000206267.png](https://cdn.steemitimages.com/DQmZdxrfn7RU1BPybtFw46eRLCJapeAamEbqSvSC1vDG3wE/1000206267.png) ❤️❤️ধন্যবাদ সকলকে❤️❤️