নমস্কার বন্ধুরা, আশা করছি সকলে ভালো আছেন। আজকে আমি আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করতে চলেছি রথযাত্রা সম্পর্কে কিছু তথ্য যেগুলো আমি দাদুর মুখ থেকে শুনেছি।।
ছোটবেলা থেকেই আমি দাদুর কাছে বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী শুনে বড় হয়েছি ।দাদু আমাদের মধ্যে না থাকলেও আমি দাদুর সেই কাহিনী গুলো ভুলতে পারিনি। দাদুর শেখানো গান ,গল্প সমস্ত কিছুই আমার মনে গেঁথে আছে।
রথযাত্রা নিয়ে দাদু আমাকে গল্প শোনাতো, দাদু বলতো রথের মধ্যে বসে থাকে জগন্নাথ ,বলরাম আর সুভদ্রা। জগন্নাথ অর্থাৎ যিনি জগতের নাথ । তিনি কৃষ্ণের আরেক রূপ।আর থাকেন ওনার দাদা বলরাম আর বোন সুভদ্রা। দাদু গল্প করত সুভদ্রা নাকি পুরী ভ্রমণ করতে চেয়েছিল, আর রথে করেই দুই ভাই মিলে বোনকে পুরীতে নিয়ে গিয়েছিল। এই বিষয় থেকেই থেকেই নাকি রথযাত্রা শুরু।
দেবতার এরকম রুপ দেখে আমি দাদুকে প্রশ্ন করতাম দাদু জগন্নাথ কেন এরকম দেখতে? পুতুলের মতন। দাদু তখন আমাকে পৌরাণিক গল্পটা শোনাত। এখন বড় হয়ে চারিপাশে যখন শুনতে পাই, ঠিক একই গল্প শুনতে পাই। তখন বুঝতে পারি এটা আসলে আমার দাদুর কোন বানানো কাহিনী নয় ,এটা আসলেই লোকমুখে প্রচলিত একটা পৌরাণিক কাহিনী ,যা আমাদের হিন্দু ধর্মের ঐতিহ্য বহন করছে এবং জগন্নাথ দেবের মাহাত্ম এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে।
বলা হয় শ্রীকৃষ্ণ মারা যাওয়ার পর সমস্ত শরীর পুড়ে গেলেও হৃৎপিণ্ড নাকি পুড়ে যায়নি আগুনে। তখন পাণ্ডবরা গঙ্গায় সেই হৃদপিণ্ড ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। সেটাই নাকি বহু যুগ পরে কাঠের মতন হয়ে রাজা ইন্দ্রধূম্নের রাজ্যে দেখা দেয় অর্থাৎ পুরীর সমুদ্রে।সমুদ্রে সেই জিনিস ভেসে আসে । রাজা স্বপ্ন পান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন ওই ভেসে আসা কাঠের টুকরোটা দিয়েই তার মূর্তি তৈরি করতে। একটা ভালো কাষ্ঠ শিল্পীকে দিয়ে।
রাজা এর পরেই রাজ্যে কাষ্ঠ শিল্পীর খোঁজ করা শুরু করেন ,অবশেষে এক বৃদ্ধ কাষ্ঠশিল্পী নিজেই তার দরবারে এসে হাজির হয়। এবং কথামতো কাঠ দিয়ে ঠাকুরের মূর্তি তৈরি হতে থাকে।
মূর্তি যিনি তৈরি করছেন তিনি প্রথমেই বলে দিয়েছিলেন তার মূর্তির তৈরি করার সময় দরজা বন্ধ থাকবে এবং কেউ যেন সেই দরজার মধ্যে দিয়ে ভেতরে প্রবেশ না করে। প্রত্যেকদিন ওই ঘরের ভেতর থেকে কাঠের কাজ হচ্ছে এরকম আওয়াজ পাওয়া যেত। কিন্তু ৭-৮ দিন যাওয়ার পরে একদিন যখন ওই ঘর থেকে কোন আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না ,তখন কৌতূহলবশত রাজা অথবা রানী ওই দরজা খুলে ফেলেছিলেন এবং দেখেছিলেন জগন্নাথের এই মূর্তি। তার অসম্পূর্ণ হাত-পা। এবং যিনি তৈরি করছেন তিনিও অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলেন। তাকে কিছুতেই ওখানে দেখা যায়নি। মনে করা হয় তিনি ছিলেন স্বয়ং দৃশ্যকর্মা।।
যাইহোক রাজা ভীষণ আফসোস করছিলেন নিজের ভুল বুঝতে পেরে। তারপর তিনি ওই মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পূজা করা শুরু করেন ।সেখান থেকেই জগন্নাথ দেবের পুজো শুরু হয়।
তবে আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে জগন্নাথ দেবের চোখটা ওরকম কেন ,সে নিয়ে কোনরকম কাহিনী আছে কিনা আমি জানিনা, তবে রথযাত্রা বিষয়ক কাহিনী জানার আমার ভীষণ ইচ্ছা আছে। আজকে গল্পে গল্পে আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পেরে ভালো লাগলো সেটা।
আমি শুনেছি পুরীতে জগন্নাথ বলরাম এবং সুভদ্রার আলাদা আলাদা রথ থাকে, প্রত্যেকটা রথের আলাদা আলাদা নাম ,তাদের সারথী আলাদা, তাদের রঙ আলাদা, এর সাথে তাদের কাঠের সংখ্যা আলাদা করা হয়। কোনদিন পুরীতে রথের সময় যাওয়া হয়নি, তবে টিভিতে সে সম্পর্কে অনেক দেখেছি।।আজ এখানেই শেষ করছি।সকলে ভালো থাকুন।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit