নমস্কার বন্ধুরা, সকলে কেমন আছেন? আশা করছি সকলেই ভালো আছেন ।আজকে আবারও নতুন একটা পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি আপনাদের মাঝে। আশা করি সকলেরই ভালো লাগবে।
বাঙ্গালীদের বারো মাসে তেরো পার্বণের অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। ঠিক তেমনই বাঙ্গালীদের দেব দেবীরা একেক সময় একেক রূপে পূজিত হয়। জামাইষষ্ঠীর ঠিক চারদিন পরেই অনুষ্ঠিত হয় গঙ্গা পূজা নামে এক রীতি। এই রীতি গ্রাম বাংলার মানুষ খুব নিষ্ঠা সহকারে মেনে থাকে। এদিন মা গঙ্গাকে আমরা দেবী রূপে পূজা করে থাকি। এইদিন গঙ্গা স্নান করলে মা গঙ্গা আমাদের সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করে দেয়। এই দিন গঙ্গা স্নান করে মা গঙ্গার আরধনা করলে অনেক মনস্কামনা পূর্ণ হয়। এই পূজা হিন্দু ধর্মের পঞ্জিকা অনুযায়ী জৈষ্ঠ্য মাসে শুক্লপক্ষের দশমী তিথিতে প্রত্যেক বছর গঙ্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। দশমী তিথিতে এই পূজা টি হয় বলে এই পূজাটি কে দশহারা বলে অভিহিত করা হয়েছে। এই দিন মা গঙ্গা সমস্ত পাপ ধারণ করে সকল কে মুক্তি প্রদান করে থাকে ।
মনসা গাছ পূজা
কথিত আছে, এই দিন মা গঙ্গা স্বর্গ থেকে মর্তে আগমন করেছিলেন ।ফলে পৃথিবীতে শস্য শ্যামলা চারিদিকে ভরে উঠেছিল। এই পুজোতে দশ রকম ফুল, ১০ রকম ফল। এবং দশটা প্রদীপ দিয়ে মা গঙ্গার আরাধনা করা হয়। এই দিন বহু জায়গায় মা মনসার মূর্তি পূজা করা হয়। তবে এই পূজাতে আরও একটি বিশেষ নিয়ম রয়েছে সেটি আপনাদের মাঝে শেয়ার করছি। প্রত্যেক বাঙালি বাড়িতে এই পূজার দিন উনুন জ্বালানো নিষিদ্ধ রয়েছে। জানিনা এই নিয়মটি কারা প্রচলন করেছে। তবে ছোট থেকে দেখে এসেছি এই দিনটিতে কারো বাড়িতে উনুন জ্বলে না। আর যাদের মধ্যে এই পূজাটি নেই ।তাদের বাড়িতে অনেকেই গিয়ে রান্নাবান্না করে নিয়ে আসে। যারা খুব নিষ্ঠা ভাবে পালন করে তারা আগের দিন পান্তা ভাত রেখে দেয়। সেগুলোই পুজোর দিন খায়। এছাড়া চিড়ে, মুড়ি এইসব খেয়ে দিন কাটিয়ে দেয়।
ছোটবেলায় দেখেছি, দিদা অন্যের বাড়িতে গিয়ে নিরামিষ রান্না বান্না করে নিয়ে আসতো। না হলে আগে দিন রান্না করে রাখত সেগুলোই পরের দিন পান্তা ভাত করে আমরা খেতাম ।এখনো সেই একই নিয়ম চলে আসছে। এখন কেউ আর না পাললে ও বাড়িতে গ্যাসে সিদ্ধ ভাত করে। তবে কোন তরকারি করতে নেই
কথাই বলে তরকারি রান্না করলে তেলে কোন তরকারি ফেললে সেটা ছ্যাঁক করে আওয়াজ হয়। ওই আওয়াজটি নাকি করতে নেই। যাইহোক অনেকেই মা গঙ্গার পূজা যেমন করে, ঠিক তেমনি মা মনসার পূজা করে থাকে ।কিন্তু দিদা কে দেখেছি ছোটবেলা থেকেই মনসা গাছের ডাল নিয়ে এসে পুজো করতে। মনসা গাছ কাটা জাতীয় গাছ।ছোটবেলাতে মনসা পূজোর আগের দিন কোন বাড়িতে মনসা গাছ আছে সেখান থেকেই ডাল ভেঙে নিয়ে আসতাম দিয়ে লাগিয়ে রেখে দিতাম। দিদা মনসা পূজার দিন ডালটি কে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হতো এরপর পূজা করতেন। শুধু দিদা বলে নয়। বহু বাড়িতে এইরকম। মনসার গাছের ডাল ভেঙে পূজা করে থাকে। সেই রীতি এখনো চলে আসছে। তবে কোনো রকম যত্ন ছাড়া গাছটি লেগে যায়।
মা মনসার মূর্তি পূজা
এই গাছে দুধ ,কলা, জবা ফুল, আরো বিভিন্ন রকমের ফল ,ছোলা মটর কলাই আরো অনেক কিছু দিয়ে পূজা করে। মনসা পূজো আসলে গ্রামবাংলায় সাপের উৎপাত কমানোর জন্য পূজা করে থাকে। এই দিন নাকি প্রত্যেক বাঙালিদের কথা মেঘ ডাকলে সমস্ত সাপের ডিম ফুটে যায়। আর মেঘ না ডাকলে কোন সাপের ডিম ফোটে না ।এটা আমি ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি। আসলেই পুজোটাই গ্রাম বাংলার লোকে সাপকে সন্তুষ্ট করার জন্য পূজা করে থাকে। এর পিছনে কোন কারণ আছে কিনা এটা আমার একদম জানা নেই। দিদার বাড়িতে কিছু মনসা পূজার ছবি শেয়ার করছি। মনসা পূজার দিন ঘুরতে বেড়িয়ে মা মনসার দর্শন পেয়েছিলাম। সেই ছবি গুলো আপনাদের মাঝে শেয়ার করলাম।
আজ এই পর্যন্তই। আবারো নতুন কোনো পোস্ট নিয়ে হাজির হব আপনাদের মাঝে।