নমস্কার বন্ধুরা। আজ আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নেব একটি বিশেষ গল্প। যে গল্পটি আমি বহুদিন আগে আমার দিদার কাছে শুনেছিলাম। আজ সেই গল্পটি আপনাদের সঙ্গে আমি আমার মত করে ভাগ করে নিচ্ছি। হয়তো এই গল্পটি অনেকেরই জানা।
লিংক লোকেশন
এক দেশের রাজা সেদেশের জনসংখ্যা কমানোর জন্য ঠিক করেছিলেন দেশের ৬০ বছরের উর্ধ্বে মানুষদের বনবাসে দেওয়া হবে। কারণ মানুষের বয়স হয়ে গেলে তারা আর কাজ করতে পারে না বরং তাদের সেবা করার জন্য আরও অন্য সব মানুষরা নানান রকম সমস্যার সম্মুখীন হয়। তার এরকম মনোভাবের জন্য দেশের বয়স্ক মানুষরা পড়লেন মহা বিপদে একে তো তাদের সন্তানরা তাদেরকে বাড়িতে রাখতে চায় না তারপরে যদি রাজার আদেশ হয় তবে তো আর কথাই নেই। তারা কোন সমস্যা না হলেও মহানন্দের সঙ্গে এই বয়স্ক মানুষের দায়িত্ব থেকে নিজেদের মুক্ত করার জন্য নাচতে নাচতে তাদেরকে বনবাসে দিয়ে আসবে।
এইভাবে রাজ্যে দিনের পর দিন বয়স্ক মানুষের সংখ্যা কমতে থাকে। আর তার সঙ্গে রাজ্যের জনসংখ্যা ও কমতে থাকে। কিন্তু দেশের জনসংখ্যা কমলেও সমস্যা আরো গুরুতর হয়ে ওঠে। কারণ সকলেই এই ভয়ে কাটাতে থাকে যে একদিন তারাও বৃদ্ধ হবে ও তাদেরকেও এরকম ভাবে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে বনবাসে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আর এই নিয়মের থেকে রাজা স্বয়ং নিজেও রক্ষা পাবে না।
একবার এক কাঠুরিয়ার সময় এলো। তিনি ভাবলেন রাজ্যে ৬০ বছরের উর্ধ্বে মানুষদের তো বনবাসে দেওয়া হবে কিন্তু এই অভিজ্ঞ মানুষদের অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হবে রাজ্য। তাই সে একটা ফোন দিয়ে আসলো ।এবং রাজাকে জানালো যে সে একটি সভা করবে যে সভায় তিনটি প্রশ্ন উপস্থাপিত হবে। এবং এই প্রশ্নগুলির উত্তর যদি রাজা দিতে পারেন তবে তার নিয়মে রাজ্য চলবে।
আর যদি তিনি না দিতে পারেন তবে কাঠুরিয়া যা চাইবে রাজাকে তাই দিতে হবে। রাজা ও তার এই প্রস্তাবনায় রাজি হয়ে গেলেন।
পরের দিন ভরে ভরে কাঠুরিয়া উপস্থিত হল রাজদরবারে এবং সে সারারাত ধরে যে প্রশ্নগুলি ঠিক করেছিল সেই প্রশ্নগুলির উপস্থাপন করলেন রাজার সামনে। এই তিনটি প্রশ্ন যথাক্রমে-
১. ছাই দিয়ে কি দড়ি তৈরি হয়?
২. একই আকারের একটি লাঠির আগার দিক ও গোড়ার দিক কি করে চেনা যাবে?
৩. কারোর সাহায্য ছাড়াই কিভাবে একটি বাদ্যযন্ত্র বাজানো সম্ভব?
রাজা মশাই ওপরের করা এই তিনটি প্রশ্নেরই উত্তর দিতে পারলেন না। তখন কাঠুরিয়া তার বাবাকে নিয়ে এলেন রাজসভায়। এবং এই প্রশ্নগুলির উত্তর দিতে বললেন। বাবা এক গজ দড়ি একটি জায়গায় রেখে সেটিকে পুড়িয়ে দেখিয়ে দিলেন ছাই দিয়ে দড়ি বানানো যায়। দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর হিসেবে তিনি লাঠি টি কে একটি জলের মধ্যে চুবিয়ে দেখিয়ে দিলেন যে লাঠির গোড়ার দিক ভারী বেশি হয় আর আগার দিক হালকা হয় তাই যে দিকটা ভারী সেদিকটা বেশি ঢুকবে । তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর হিসেবে তিনি তার তৈরি একটি ডুগডুগি রাজা মশাইয়ের সামনে উপস্থাপন করলেন যেটি সত্যি বাজানোর জন্য কাউকে প্রয়োজন হচ্ছিল না। কারণ ডুগডুগি একবার ঝাঁকিয়ে দেওয়ার ফলে ডুগডুগির মধ্যে থাকা মৌমাছির চাক থেকে বেরিয়ে মৌমাছিরা এদিক ওদিক যখন উড়ছিল তখন ডুগডুগির ভেতর থেকেই বাজনা বাজার আওয়াজ বেরিয়ে আসছিল।
রাজা মশাই কাঠুরিয়ার বাবার এই উত্তর শুনে খুব খুশি হলেন এবং কাঠুরিয়া কে তার প্রাপ্য উপহার চেয়ে নিতে বললেন। কাঠুরিয়া তখন তা রাজা মশায়ের কাছে তার বাবাকে বনবাসে যাতে না দেওয়া হয় তার জন্য প্রার্থনা করলো। শুধু তাই নয় তিনি রাজা মশাইকে বুঝিয়ে দিলেন যে সংসারে বয়স্ক মানুষদের খুবই প্রয়োজন কারণ বয়স্ক মানুষদের অভিজ্ঞতা না থাকলে এই সমাজটা সুন্দর হয়ে উঠবে না। আর তাদের দেখেই তাদের উত্তরসূরী তৈরি হবে। তাই তারাই যদি গোড়ায় এত বড় গলদ করে ফেলে তবে আগামী প্রজন্ম কি শিখবে।
এছাড়া কাঠুরিয়া রাজা মশাইকে আরো বললেন ,যে পিতা-মাতা শৈশবে আমাদের সকল দায়িত্ব নিয়েছিলেন ,তাহলে আমরা তাদেরই সন্তান হয়ে কিভাবে বৃদ্ধা অবস্থায় নিজেদের সেই পিতা-মাতার সেবা করতে অস্বীকার করি। এবং পিতা-মাতার সেবা আমাদের কখনোই বোঝা হয়ে হতে পারে না বরং এ হল আমাদের সৌভাগ্য যে ,আমরা সেই সকল মানুষের সেবা করতে পারছি, যারা আমাদের আজকে এই জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল আমরা ভোগ করছি।