নমস্কার বন্ধুরা। আশা করি সকলেই ভাল আছেন। আজ আলোচনা করব আমাদের বিশেষ একটি বৈশিষ্ট্য যেটিকে বলতে পারেন আমাদের গুণাবলী সেটি হল আমাদের দায়বদ্ধতা অর্থাৎ আমরা কতটা দায়িত্ববান।
লিংক লোকেশন
সমগ্র প্রাণীর মধ্যে এই দায়বদ্ধতা বৈশিষ্ট্যটি রয়েছে তবে মানুষের মধ্যে হয়তো এটা বেশি। আর আমাদের বাঙ্গালীদের মধ্যে তো এটা আরো বেশি। তাইতো আমাদের দেশের মহান মানুষদের একটাই ইচ্ছা বা কামনা সেটি হল আমাদের জন্ম এ দেশে এবং আমরা যেন এ দেশেই মারা যায়।
প্রত্যেকটি প্রাণীর মধ্যেই স্নেহ ভালবাসা এবং দায়িত্ব বোধ বিষয়টি রয়েছে। কিন্তু এই স্নেহ ভালবাসার ওপর দিয়ে হলো দায়িত্ববোধ। কারণ মানুষ বাদে অন্য সকল প্রাণীরা তাদের সন্তান লালন-পালনের ক্ষেত্রে দায়িত্ব একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পালন করে থাকে। তারপরে সে তার সন্তানকে ছেড়ে দেয় প্রকৃতির কোলে । এবং সন্তানের সঙ্গে তার আর কোন যোগাযোগ থাকে না ও সন্তানের কোন দায়িত্ববোধই তার মা বাবা পালন করে না।
অপরপক্ষে মানুষ হলো সেই প্রাণী , বিশেষ করে বাঙালি যারা মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত তার সন্তানের দায়িত্ব পালন করে থাকে। সন্তান জন্মানোর পর তার লালন পালন সঠিকভাবে করে তাকে বড় করে তোলা তারপর দায়িত্ব হল সন্তানের জন্য একটি আদর্শ শিক্ষা প্রদান করা যাতে করে সে ভবিষ্যতে ভালো মানুষ হয়ে উঠতে পারে। তারপরে আবার দায়িত্ব এসে যায় সন্তানকে নিজের পায়ে দাঁড় করিয়ে দেওয়ার। অর্থাৎ সে যাতে তার কর্মজীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে সে দায়িত্ব বেশিরভাগটা মাবাবাই পালন করে থাকেন।
এরপরে আবার মা বাবার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হয়ে থাকে সন্তানের সঠিক জীবনসঙ্গী নির্বাচন। অর্থাৎ মানুষ যেন দায়িত্ব পালন করার একটি যন্ত্র। তার যেন কোনোভাবেই নিজের জন্য সময় নেই। শুধুমাত্র তার একটাই কাজ তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মানুষদের প্রতি তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন। শুধুমাত্র এই দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করে মানুষের জীবন ক্ষান্ত হয় না এই দায়িত্ব পালনের কাজটি যতই সঠিকভাবে হোক না কেন তবুও তার ভাগ্যে জোটে কেবলই লাঞ্ছনা ও গঞ্জনা। সামনে যতই তাকে আদর আপ্যায়ন করুক না কেন পিছনে তার বদনাম করতে এক বিন্দুও জিভ থমকে দাঁড়ায় না।
মানুষের যেন এই দায়িত্ব পালন করার অভ্যেসটা এমনভাবে রক্তের সাথে মিশে গিয়েছে যে সে তার এই দায়িত্ব পালন থেকে কোনভাবেই বিরত নিতে চায় না শুধু নিজের সন্তান-সন্ততি নয়, সন্তানের সন্তানদের নিয়েও তার বিষম চিন্তা। তাইতো তাদের কোনোভাবেই নিজের প্রতি নজর দেওয়ার সময় থাকে না। ব্যক্তিগত জীবনে নিজেকে বাদ দিয়ে সে সকলের চিন্তা নিয়ে তার সমগ্র জীবন কাটিয়ে দেয়। এবং জীবনের শেষ প্রান্তে এসে যখন ফিরে তাকায় তখন তার পুরো জীবনটাই সে অন্যের সেবায় কাটিয়ে দিয়েছে এই ভেবে নিজেকে আশ্বস্ত করে ও নিজের জীবনের শেষ দিনের মুহূর্ত গুলি একাকী নির্জনে কাটিয়ে দেয়।
আর এই যে মানুষগুলি বিশেষ নিপুণতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করেছিল সেই মানুষগুলির জীবনের শেষ আশ্রয় হয়ে ওঠে বৃদ্ধাশ্রম। এই বৃদ্ধাশ্রম বা অল্ড এজ হোম আগে বিদেশে প্রচলিত থাকলেও এখন আমাদের এখানে এর বিশেষ প্রচলন শুরু হয়েছে। আর এই বৃদ্ধাশ্রমে যখন সেই অসহায় মানুষগুলিকে তারা রেখে আসে একবারের জন্য তাদের স্মৃতি পটে ভেসে ওঠে না এই মানুষগুলির অবদানের কথা। কিছু মানুষ শুধু দিতেই এসেছে আর কিছু মানুষ শুধু নিতেই এসেছে। এই প্রথা যেন আস্তে আস্তে একটি বৃত্তাকার চক্রের মত ঘুরবে যে আজ তার বাবা-মাকে এক অনিশ্চিত জীবনের মুখে ঠেলে দিচ্ছে তার জীবনেও সেই অনিশ্চয়তাই ঘটবে । এবং ধীরে ধীরে এই অনিশ্চয়তার জীবন প্রত্যেকের জীবনে আসতে চলেছে। তাই দায়িত্ব পালন করা ভালো। কিন্তু অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের ফল খারাপ হয়ে উঠছে সেই কথা ভেবে মানুষের একটু দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকা উচিত। ও একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর প্রত্যেককে তাদের নিজেরদের জীবনের দায়িত্ব নিজেদের উপরেই ছেড়ে দেওয়া উচিত।