পাঁচ ভাইয়ের গল্প

in hive-120823 •  4 months ago 

নমস্কার বন্ধুরা, আজ আপনাদের সাথে ভাগ করে নেব একটি সুন্দর গল্প। যে একটি বিশেষ শিক্ষা দিয়ে যায় আমাদেরকে। এ ধরনের গল্প আমরা অনেকেই শুনেছি তবে এই গল্পটি একটু অন্যরকম। যে গল্পের মধ্যে দিয়ে আমাদের জীবনের মূল অস্তিত্ব কোথায় বিদ্যমান সেটা আমরা অনুভব করার চেষ্টা করব।

ai-generated-9459350_640.jpg

লিংক লোকেশন
এক বার ৫ ভাইয়ের মধ্যে ভীষণ ঝগড়া শুরু হয়েছে। এই পাঁচ ভাইয়ের মনে হল প্রত্যেকেই শ্রেষ্ঠ এবং সর্বোত্তম। যেহেতু তারা সব সময় একইসঙ্গে অবস্থান করে তাই তাদের এমন ধরনের মনোভাব তৈরি হয়েছে যে তারা কেউ যদি একজন না থাকে তাহলে হয়তো চলবে না। এই পাঁচ ভাই হল আমাদের চক্ষু, আমাদের বাকশক্তি, আমাদের কর্ণ, আমাদের মন এবং আমাদের আত্মা বা প্রাণ।
পাঁচ ভাই নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করতে করতে যখন কোন সমাধান করতে পারল না তখন তারা সৃষ্টিকর্তা অর্থাৎ প্রজাপতি ব্রহ্মার কাছে উপস্থিত হল। কারণ তাদের এই সমস্যার সমাধান কেউই করতে পারেনি। আর যেহেতু প্রজাপতি ব্রহ্মা এই জগত সৃষ্টি করেছেন তাই এই জগতের প্রত্যেকটি বিষয় তিনি জানেন।
IMG_20250304_100539.jpg

কিন্তু যেহেতু তিনি জগৎ পিতা তাই তিনি কোনভাবেই নিজের সন্তানদের মধ্যে কে ছোট কে বড় বা কে বেশি শক্তিমান তা নির্বাচন করে বলতে পারেন না তাহলে তার অন্য সন্তানদের কষ্ট হবে। তাই তিনি অনেক ভাবনা চিন্তা করে একটি পথ খুঁজে পেলেন। এবং তিনি তার সন্তানদের বললেন তোমরা প্রত্যেকে যে যার মত একে অপরের থেকে অনেক দূরে চলে যাও। কেউ কারো সাথে থেকো না। এবং যখন দেখবে যাকে ছাড়া একেবারেই চলছে না তখন বুঝবে সেই সর্বশক্তিমান এবং সকলের চেয়ে বড়।
এই কথা শুনে প্রথমে তো বাক শক্তির ভীষণ অহংকার হল। সে ভাবলো আমি না থাকলে কেউ কথাই বলতে পারবে না। আর কথা বলতে না পারলে তারা মনের ভাব প্রকাশ করবে কি করে? আর মনের ভাব প্রকাশ করতে না পারলে জগত চলবে কি করে। তাই সে চলে গেল। মাস গেল বছর গেল যখন কেউ তাকে ডেকে নিয়ে আসলো না তখন সে নিজেই ফিরে এল। এসে দেখলে সকলেই খুব ভালো আছে ইশারার মাধ্যমে তারা বেশ নিজেদের ভাব প্রকাশ করতে পারছে। তাই তাকে আর কারোর প্রয়োজন নেই। এই অবস্থা দেখে বাক শক্তির অহংকার ভেঙে গেল। সে নিরুপায় হয়ে তার ভাইদের কাছে ফিরে এলো। যেভাবে আমাদের চারিপাশে এমন অনেক বধির মানুষ আছেন যাদের কথা বলার শক্তি তো নেই কিন্তু তারা বেশ ভালোভাবে জীবন যাপন করছেন
এরপর কর্ণ অর্থাৎ শ্রবণ শক্তি গর্ব করে চলে গেল। সে ভাবলো যদি কেউ কানেই না শোনে তবে সে বুঝবে কি করে তাকে কোন কাজ করতে বলা হচ্ছে। তাই আমি যদি চলে যাই তাহলে কারোরই চলবে না। কিন্তু দেখা গেল শ্রবণশক্তি ছাড়া বাকি সকলে ভালই আছে তাদের কোন অসুবিধাই হচ্ছে না। তাই কিছু মাস পর শ্রবণশক্তি নিজের ভুল বুঝতে পেরে সকলের কাছে মাথা নত করে ফিরে এলো।
এরপর চোখ তো আরো অহংকারে ফুলে গেল । সে বলল তাকে ছাড়া জগতের কোন কিছুই দেখতে পাবে না সবকিছুই অন্ধকার। তাই বাকিরা থাকলেও তারা একবিন্দুও চলতে পারবে না। কিন্তু দেখা গেল চোখকেউ কেউ ডেকে আনলো না। এবং চোখ না থাকাতেও কারোর কোনো অসুবিধাও হলো না। যেমনটা চলছিল তেমনটাই চলছে। তাই কিছুদিন পরেই সে নিজের ভুল বুঝতে পেরে সকলের কাছে ফিরে এলো।
এরপর মনের পালা সে ভাবলো দেখো তোমাদের কারোরই শক্তি আমার মত এত বেশি নয়। আমি যদি না থাকি তবে তোমরা চিন্তাই করতে পারবে না আর যদি চিন্তা না করতে পারো তাহলে তোমরা কাজ করবে কি করে এই ভেবে সে চলে গেল। কিন্তু দেখা গেল মন না থাকায় সকলে আরো বেশি ভালো করে কাজ করছে তারা যে কাজ করছে সে কাজ এত সুন্দর ভাবে করছে, যে বলাই যায় না। ঠিক যেমন শিশুরা। শিশুদের মন অতটা কাজ করে না তাইতো তারা নিজের ইচ্ছা মত যা খুশি তাই কাজ করতে পারে তাদের কোন চিন্তাও থাকে না তাই কোন দুঃখ থাকে না। সর্বদা মহানন্দে জীবন কাটাতে পারে।
এরপর পালা এল প্রানের। সে যেই চলে যাবে তার প্রস্তুতি নিচ্ছে ,সেই সকলে হাঁসভাসিয়ে উঠলো। সবাই মরি মরি করে প্রাণের কাছে লুটিয়ে পরল। এবং প্রার্থনা করলো সে যেন তাদেরকে ছেড়ে না যায়। প্রাণ শক্তি না থাকলে জীবন থাকবে না আর জীবন না থাকলে চোখ, কান ,বাকশক্তি ,ও মন এরাও আর কোন কাজ করতে পারবে না। ঢলে পড়বে মৃত্যুর মুখে।
তাই সকলের কাছে প্রমাণ হল প্রাণশক্তি হলো সর্বশক্তিমান। এই প্রাণশক্তি আছে বলেই সকলের কাজ আছে। আর যদি প্রাণশক্তি না থাকে সকলে থেকেও তাদের আর কোন কাজ নেই।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  
Loading...

আমরা আমাদের মিথ্যে অহংকার নিয়ে পৃথিবীতে খুব বেশিদিন বেঁচে থাকতে পারি না আল্লাহ তায়ালা আমাদের শরীরে যতক্ষণ প্রাণ রেখেছে ততক্ষণ কিন্তু আমাদের শরীরের প্রতিটা অঙ্গ কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক তবে আপনার গল্পটা সত্যিই অসাধারণ এখান থেকে আমাদের সবার অবশ্যই শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত ধন্যবাদ ভালো থাকবেন।