এনগেজমেন্টের দিন সকালের কিছু মুহূর্ত

in hive-120823 •  5 months ago 

নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি সকলেই খুব ভালো আছেন। আজ আবারো চলে এসেছি আপনাদের সাথে নতুন কিছু গল্প শেয়ার করে নেওয়ার জন্য। আশা করছি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে। আজ আমি আপনাদের সাথে আমার এনগেজমেন্টের দিনের সকালের কিছু মুহূর্ত শেয়ার করতে চলেছি।

আমার গত অনেক পোস্টেই আপনাদের জানিয়েছিলাম যে গত ১৬ ই জানুয়ারি আমাদের ( আমার আর শুভায়নের) এঙ্গেজমেন্ট হয়েছিল। তার প্রস্তুতির বিভিন্ন পর্ব আপনাদের সাথে আমি আগেই শেয়ার করেছি তবে নানা ব্যস্ততার কারণে আসল দিনটার কোনো মুহূর্তই আপনাদের সাথে শেয়ার করা হয়ে ওঠেনি। তবে গতকাল আমি জানিয়েছিলাম যে আজ আমি অবশ্যই আপনাদের সাথে আমার এনগেজমেন্ট এর দিনের মুহূর্তগুলো শেয়ার করার চেষ্টা করব। তাই আজ চলে এসেছি সেই গল্পগুলোই আপনাদের সাথে তুলে ধরার জন্য।

1000152306.jpg

যেহেতু একা হাতে কেনাকাটা থেকে শুরু করে তত্ত্ব সাজানো, মিষ্টি হাঁড়ি রং করা ও নানারকমের কাজ আমি নিজেই সামলে ছিলাম তাই নানা রকমের চিন্তা তো ছিলোই। তাই তার আগে তিন মানে ১৫ তারিখ রাত থেকেই আমার শরীরটা ভীষণ খারাপ করতে শুরু করে। ভোর তিনটার দিকে এতটা অস্বস্তি হচ্ছিল যে আমি আর শুয়ে থাকতে পারিনি। তারপর শুরু হয় বমি, মাথা ঘুরানো এরকমই নানা ধরনের সিমটম। ঘরে থাকা ওষুধ খেয়ে অনুক্রমে শুয়ে ছিলাম। যদিও বুঝতে পারছিলাম ভিতরে ভিতরে আমার ভীষণ টেনশন হচ্ছে। টেনশন তো মানুষ করতে চাই না সেটা একাই হয়ে যায়। যেহেতু আমার শ্বশুরবাড়ির থেকে কেউ আমাকে দেখতে আসেনি অর্থাৎ অ্যারেঞ্জ ম্যারেজের ক্ষেত্রে যেরকমটা হয় আর কি ছেলের বাড়ি থেকে লোকজন আসে মেয়েকে দেখতে সেরকম কিছুই আগে হয়নি। এই দিনের প্রোগ্রামেই ওদের বাড়ির আত্মীয়-স্বজন আমাকে প্রথমবার দেখেছিল। তাই নতুন মানুষজন আমাকে কিভাবে একসেপ্ট করবে এইসব নিয়েই নানা রকম ভাবনা চিন্তা চলছিল। যার ফলস্বরূপ ভোর থেকেই শরীরটা ভীষণ খারাপ করতে শুরু করে।

যাই হোক, যেখানে আমাকে নিয়েই প্রোগ্রাম সেখানে আমি তো অনুপস্থিত থাকতে পারিনা। তাই ওষুধ খেয়ে মনে জোর এনে সকাল সকাল আমি বেরিয়ে পড়েছিলাম। যেহেতু সেই দিনের আয়োজনটা দুই বাড়ি মিলে করলেও যে লজে হয়েছিল সেটা আমার শ্বশুরবাড়ির কাছাকাছি তাই যে দিদিটা আমাকে সাজিয়ে ছিল তাকে আমি সকাল সকাল সেই লজেই চলে আসতে বলেছিলাম। তাই আমি সমস্ত জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে আটটার মধ্যে লজে যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছিলাম। আমি তখন একাই গিয়েছিলাম। আমার বাড়ির লোকজন দশটার দিকে তত্ত্ব নিয়ে সেখানে পৌঁছেছিল।

1000152308.jpg

আমি সেখানে গিয়ে দেখি এখনো কিছুই রেডি হয়নি। ডেকোরেটার দাদারা সমস্ত সরঞ্জাম রেডি করছে। এটা দেখে প্রথমে একটু ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম যে ওরা সময়ের মধ্যে পুরোটা রেডি করে দিতে পারবে তো! ওদের সময় দেওয়া ছিল আরো একটু আগে কিন্তু সেদিন প্রচন্ড ঠান্ডা পড়েছিল যার ফলে ওরা আসতে অনেক লেট করেছিল। যাই হোক ওরা কিন্তু জোর কদমে ওদের কাজ চালাচ্ছিল। যেহেতু তখনো মেকআপ আর্টিস্ট দিদি আসেনি তাই আমি ঘুরে ঘুরে ওদের কাজ দেখছিলাম আর মাঝে মাঝে কিছু ফটো ও ভিডিও তুলে রাখছিলাম।

1000152310.jpg

এরপর কিছুক্ষনের মধ্যে শুভায়ন লজে এসেছিল। নীচে তখন সকালের ব্রেকফাস্ট তৈরি হচ্ছিল ‌। ব্রেকফাস্টে ছিল লুচি, আলুর দম আর মিষ্টি। যেহেতু আসার পথে কোন মেডিসিনের দোকান খোলা পাইনি তাই শুভায়ন অন্য কোন মেডিসিনের দোকান থেকে আমার জন্য ওষুধ এনে দিয়েছিল। তারপর কিছুক্ষণ ডেকোরেশনের কাজ দেখছিল। এরপর আমরা সাজার আগে কয়েকটা সেলফি তুলে নিয়েছিলাম।

1000152313.jpg

ইতিমধ্যে মেকআপ আর্টিস্ট দিদি চলে এসেছিল। এই মেকআপ আর্টিস্ট দিদি কে আমি বহুদিন ধরে ফেসবুকে ফলো করে রেখেছিলাম। এই দিদির কাজ আমার ভীষণ ভালো লাগে। মনে মনে ভেবেছিলাম কোন একদিন অবশ্যই এই দিদির কাছ থেকে সাজবো। তবে শেয়ার হয়ে ওঠেনি। তাই এনগেজমেন্টের ডেট ঠিক হওয়া মাত্রই আমি মনস্থির করেছিলাম এই দিদির কাছেই সাজবো। তাই প্রায় আট মাস আগে পার্টি মেকাপের জন্য দিদিকে বুক করে রেখেছিলাম। পার্টি মেকআপের জন্য এই দিদি চার্জ একটু বেশি হলেও যেহেতু প্রথম বার কোন মেকআপ আর্টিস্টের কাছে সাজাবো ভেবেছিলাম তাই এই দিদিকে বুক করেছিলাম। দিদি এসে এক এক করে শাড়ি পরানো, মেকআপ করা, হেয়ার করা ইত্যাদি খুব সুন্দর ভাবে অল্প সময়ের মধ্যে করে ফেলেছিল। যদিও আমার প্রথমে খুব লজ্জা লাগছিল এত সাজার পর তবে পরে যখন সবাই ভালো ভালো কমপ্লিমেন্ট দিচ্ছিল তখন বেশ ভালো লাগছিল।

1000152315.jpg

এই দিনের আরো সুন্দর সুন্দর মুহূর্তগুলো আপনাদের সাথে পরবর্তী পোস্টের মাধ্যমে অবশ্যই শেয়ার করব। আজ তাহলে এখানেই শেষ করছি। আপনারা সকলে বলবেন আমার সেই দিনের মেকওভার আপনাদের কেমন লেগেছে। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

আসলে পরিবারের মধ্যে সদস্য সংখ্যা কম থাকলে নিজের বিয়ের কাজ নিজেকেই করতে হয় যেমনটা আপনি নিজেই করেছেন এটা ঠিক যে হঠাৎ করে তারা যখন আপনাকে দেখতে আসবে তখন তারা কিভাবে আপনাকে মেনে নেবে এটা নিয়ে অনেক ধরনের চিন্তা একটা মেয়ের মধ্যে আসতেই পারে সব চিন্তা উপেক্ষা করে আপনি সঠিকভাবে সব কাজ সম্পূর্ণ করেছেন এটা দেখেই অনেক বেশি ভালো লাগছে।

তবে এটা অবশ্যই বলব আপনার প্রিয় মানুষ আপনাকে অনেক বেশি টেক কেয়ার করে আপনি মেকআপ আর্টিস্ট দিদিকে অনেক দিন থেকেই ফলো করছেন আপনার এংগেজমেন্টের দিন তার কাছে সেজেছেন আপনাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে এভাবেই প্রিয় মানুষগুলোর সাথে আপনার বাকি দিনগুলো কাটিয়ে দিন এটাই কামনা করে সৃষ্টিকর্তার কাছে ভালো থাকবেন।

আপনার এনগেজমেন্টের পোষ্টের প্রতিটি মুহূর্ত খুব সুন্দরভাবে এখানে পরিবেশিত হয়েছে। সত্যিই প্রত্যেকটি মেয়ের জীবনে এই দিনটি একটি বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। তারপরে যদি নিজের এনগেজমেন্ট এর সব দায়িত্ব নিজেকেই পালন করতে হয় তবে তো তার আর কথাই নেই। সে কারণে আপনার টেনশনটা হওয়া একটু স্বাভাবিক। তবে নতুন পরিবেশে গিয়ে মনে হয় না আপনার কোন অসুবিধা হবে কারণ আপনি যা মিষ্টি মেয়ে তাতে যে কেউ আপনাকে খুব সহজেই গ্রহন করে নেবে। ভালো থাকবেন নতুন জীবন সুন্দর ও আনন্দময় হোক ভগবানের কাছে এই প্রার্থনা করি।

অনেক অনেক ধন্যবাদ পাপিয়া দি।

আপনার এনগেজমেন্টের দিনের অভিজ্ঞতা অসাধারণভাবে তুলে ধরেছেন। প্রতিটি মুহূর্তের বর্ণনা এত সুন্দর ভাবে দিয়েছেন যে পড়তে পড়তে যেন চোখের সামনে দৃশ্য গুলো ভেসে উঠছিল। আপনার টেনশন প্রস্তুতির ব্যস্ততা সুভায়নের সাথে প্রথম মুহূর্তগুলো সব কিছুই খুব সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে। বিশেষ করে আপনার মেকআপ আর্টিস্ট দিদির প্রতি ভালো লাগার অংশটুকু বেশ মজার ছিল।

আপনার মেকওভার দারুন লেগেছে, আর পুরো অভিজ্ঞতাটাই খুব সুন্দর ছিল বলে মনে হচ্ছে। আশা করি পরবর্তী অংশ এমন চমৎকার অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন।আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।

অনেক অনেক ধন্যবাদ দিদি আপনাকে। এত্ত সুন্দর সুন্দর কমেন্ট করার জন্য।

Loading...