শৈশবের কোরবানির ঈদ: এখনো মন খুঁজি সেই দিনগুলো

in hive-129948 •  15 days ago 

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন আমার প্রিয় সহযাত্রী ভাই বোনেরা? আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের সবার দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। তবে মনমানসিকতা ভালো নেই। আর মনমানসিকতা যদি ভালো না থাকে তাহলে শরীর মন অচল হয়ে পড়ে। তারপরেও আপনাদের সবার মাঝে আমার আরও একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। আজ আমি একটি শৈশবের কিছু কথা নিয়ে আপনাদের সবার মাঝে হাজির হয়েছি।আশা করি আপনাদের সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে। তাহলে চলুন আজ আমার শৈশবের কিছু স্মৃতির অনুভূতি জেনে আসি।

আসলে শৈশবকাল আমাদের সবার জীবনে একটি স্মৃতিমধুর। আমি মনে করি শৈশবের স্মৃতি আমাদের সবার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যা আমাদের প্রতিটিদিন প্রতিটি মুহূর্ত ফিরিয়ে নিয়ে যায় সেই শৈশবের দিনগুলোর মাঝে। শৈশবে আমাদের ছিল না কোন ভাবনা, ছিলনা কোন দুঃশ্চিন্তা বা কোন দায়িত্ববোধ। তখন আমাদের প্রতিটি দিন ও মুহূর্ত ছিল একদম সাদাসিদে ও আনন্দ পূর্ণ। এখনো সেই দিনগুলোর প্রতিটা সময় ও মুহূর্তগুলো মনে পড়লে মনে হয় যেন সেদিনের সেই দিন গুলোই অনেক সুন্দর ছিল। এখন ভাবী কেন বড় হতে গেলাম। চাইলেও ফিরে যেতে পারবো না সেই শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলোতে। তাইতো আজও চলে গিয়েছিলাম শৈশবের কিছু মধুর স্মৃতিতে। আর সেই মধুর স্মৃতির কিছু অংশ আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এলাম।

aladha-9603635_1280.png

Source

কোরবানির ঈদ মানেই উৎসব, আনন্দ আর ত্যাগের শিক্ষা। কিন্তু আমাদের শৈশবের কোরবানির ঈদের কথা আলাদা। সেখানে ছিল খাঁটি খুশি, নিঃস্বার্থ অপেক্ষা, এবং কিছু কিছু মধুর স্মৃতি, যেগুলো এখনো মনের কোণে গুঞ্জন তোলে। আজ যখন বড়দের চোখে ঈদ দেখি, তখন হিসেব আর দায়িত্বের পাল্লা ভারী হয়ে ওঠে। তখনই মনে পড়ে — শৈশবে কোরবানির ঈদ কেমন ছিল! ঈদের আগে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল হাট। আব্বা বা বড় ভাইদের সঙ্গে হাটে যাওয়ার জন্য আমরা সারাবছর অপেক্ষা করতাম। পশু না কিনলেও শুধু পশুর হাটে যাওয়া, হাজার হাজার পশু দেখা, দাম দর শোনা — তাতেই কত আনন্দ! সাদা, কালো, বাদামি, ডোরাকাটা — কত রকমের পশু!

একেকটাকে দেখে একেক নাম দেওয়া হতো — ‘বাদশা’, ‘টাইটানিক’, ‘রকস্টার’। আর যখন আমাদের পশু কেনা হতো, তখন সে যেন পরিবারের সদস্য হয়ে যেত। তার জন্য আলাদা খড়, পানি, ঘাস — এমনকি ডাকনামও! যেদিন বাড়িতে কোরবানির পশু আসত, মনে হতো ঈদ এসে গেছে। পাড়ার বাচ্চারা দল বেঁধে গরু দেখতে আসত। কেউ বলত, “এই পশুটা তো খুব শক্তিশালী”, কেউ আবার বলত, “এটা কোরবানি দিতে পারবে তো?” আমরা তখন বুক ফুলিয়ে বলতাম, “এইটা একাই তিনজন সামলায়!” সেই সময় পশু দেখভাল ছিল আমাদের প্রধান কাজ। পশুকে খাওয়ানো, গোসল করানো, রশি ধরে রাখা — সব করতাম ভালোবাসা দিয়ে, যত্নে।

ঈদের আগের রাত মানে ছিল একরাশ উত্তেজনা। পশুর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা, বারবার তাকানো, “কাল ওর কোরবানি হয়ে যাবে”— এই ভাবনায় মন হালকা খারাপ হয়ে উঠত। মা নতুন জামা-কাপড় ভাঁজ করে রাখতেন, আমরা সেটায় আবার হাত দিতাম, আয়নায় গায়ে দিয়ে দেখতাম কেমন লাগছে। তবে ঘুম? ঘুম কই! ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকতাম। মাঝরাতে উঠে আবার পশুর কাছে গিয়ে দাঁড়াতাম। ও কি খাচ্ছে? ঠিক আছে তো? ঈদের সকালে নতুন জামা পড়ে আমরা ঈদগাহে যেতাম। নামাজ শেষে হাত তুলে দোয়া করতাম — আমাদের পশুটা যেন কোরবানি হিসেবে কবুল হয়। ঘরে ফিরে দেখি পশুর কাঁধে মালা পরানো, মাথায় রঙ তোলা — সে তৈরি। তখন চোখের কোণে পানি চলে আসত। সে তো এখন পরিবারেরই একজন! তবুও জানতাম, এটিই ঈদের শিক্ষা — ত্যাগ।

পশু কোরবানি দেওয়ার সময় আমরা দূরে দাঁড়িয়ে থাকতাম। কেউ কেউ কান্না করত, কেউ তাকিয়ে থাকতে পারত না। কেউ আবার সাহস করে সামনে গিয়ে দাঁড়াত। আমরা জানতাম, এই কোরবানি আমাদের ঈমানের অংশ, কিন্তু মনের ভেতরটা কেমন খালি খালি লাগত। এক ধরনের শোক মিশে থাকত ঈদের আনন্দে। কোরবানি শেষে শুরু হতো মাংস কাটাকাটি, ভাগ করা, ওজন করা। মাংস মাপা, প্যাকেটে ভরা, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া — এই কাজগুলো করতাম খুব আনন্দ নিয়ে। মা বলতেন, “তিন ভাগে ভাগ করতে হয় — নিজের জন্য, আত্মীয়ের জন্য, গরিবের জন্য।” এই ভাগাভাগির মাঝেই শিখতাম ঈদের আসল শিক্ষা — সহানুভূতি আর মানবতা।

ঈদের দুপুর মানেই মায়ের হাতে রান্না করা মজাদার খাবার। মাংস দিয়ে চাপ, রেজালা, কালাভুনা, লিভার ভাজি — সব যেন গন্ধেই খিদে বাড়িয়ে দিত। একসাথে পুরো পরিবার এক পিঁড়িতে বসে খাওয়া — এই দৃশ্য আজকের দিনে অনেক ঘরে হারিয়ে গেছে। ঈদের দিনে বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবরা আসত। সবাই একসাথে বসে গল্প, খাওয়া, পুরনো দিনের স্মৃতি — সবকিছু মিলিয়ে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ থাকত। আমরা বাচ্চারা তখন ঈদির আশায় ঘোরাঘুরি করতাম, বড়দের কাছ থেকে টাকাগুলো জমিয়ে রাখতাম খেলনার দোকানে যাওয়ার জন্য।

আজকের দিনে দাঁড়িয়ে যখন শৈশবের ঈদকে মনে করি, চোখে পানি চলে আসে। তখনকার ঈদে ছিল আন্তরিকতা, সরলতা, ভালোবাসা আর একটুখানি কান্না। আজ বড় হয়েছি, দায়িত্ব বেড়েছে। ঈদের আনন্দ আছে, কিন্তু সেই নির্মল অনুভূতির জায়গাটা কেমন যেন ফাঁকা। পশুর জন্য গলায় ঝাঁঝ ওঠে না, ঈদের আগের রাতে ঘুম হারায় না। কোরবানির আসল মানে: ত্যাগ, ধৈর্য, আত্মনিয়ন্ত্রণ,মায়া: গরুর সঙ্গে গড়ে ওঠা সম্পর্ক,দায়িত্ব: পরিবারের পাশে দাঁড়ানো, ভালোবাসা ও একতা: একসাথে ঈদ পালন, শৈশবের কোরবানির ঈদ একরাশ স্মৃতি, এক টুকরো আবেগ, এক ধরনের ভালোবাসা — যা আজও আমাদের ছুঁয়ে যায়। সেই ঈদে হয়তো দামি জামা ছিল না, কিন্তু ছিল মায়া। পশুর নামকরণ থেকে শুরু করে কোরবানির কান্না — সব মিলিয়ে ছিল এক অনন্য ভালোবাসার গল্প। আজ আমরা প্রযুক্তি, আরাম, আর সামাজিক ব্যস্ততায় ঈদের রূপ বদলে ফেলেছি। কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয়, ফিরে যাই শৈশবের সেই স্মৃতিতে— যেখানে পশুটি দাঁড়িয়ে আছে, আর আমি তার পাশে দাঁড়িয়ে বলছি, “বাদশা, আমি তোকে খুব ভালোবাসি।”

কেমন লেগেছে আপনাদের সবার কাছে আজ আমার শৈশবে ফেলে আসা সুন্দর কিছু স্মৃতি নিয়ে পোস্টটি। আশা করছি আপনাদের সবার কাছে আমার পোস্টটি পড়েও অনেক ভালো লেগেছে সবাই ভালো ও সুস্থ থাকবেন সে পর্যন্ত আগামীতে আবার নতুন ব্লগ নিয়ে আপনাদের মাঝে চলে আসবো ইনশাল্লাহ আল্লাহাফেজ।

❤️❤️ধন্যবাদ সকলকে❤️❤️

image.png

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png