আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন আমার প্রিয় সহযাত্রী ভাই বোনেরা? আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের সবার দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। আশা করি সবার দিনটা ভাল কেটেছে। আজকে আপনাদের সবার মাঝে আমার আরও একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। আজ আমি একটি লাইফ স্টাইল পোস্ট নিয়ে আপনাদের সবার মাঝে হাজির হয়েছি।আশা করি আপনাদের সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে। তাহলে চলুন আজ আমার লাইফ স্টাইল পোস্ট দেখে আসি কেমন হয়েছে।

ঢাকার ব্যস্ততম এক অঞ্চলে, যেখানে প্রতিদিন হাজারো মানুষের পদচারণা, সেখানে লুকিয়ে রয়েছে এক টুকরো স্বাদ ও স্মৃতির আস্তানা—খিলগাঁও তালতলা সিটি সুপার মার্কেট। আর এই বাজারের সামনেই রয়েছে এমন এক চমৎকার খাবারের জগৎ, যা শুধু পেট নয়, মনও ভরে দেয়। শীত হোক বা গ্রীষ্ম, বছরের প্রতিটি দিন সেখানে পাওয়া যায় চিতই পিঠা আর নানা ধরনের মজাদার ভর্তা। আমাদের বাসা এই মার্কেটের একদম সামনেই। ফলে প্রায়ই চোখে পড়ে ধোঁয়া ওঠা চিতই পিঠা, লেবু-পেয়াজে মাখানো আলু ভর্তা, শুটকি ভর্তা আর সরিষা তেলে ভাজা মরিচের স্বর্গীয় গন্ধ। সেদিন বিকেলে হঠাৎ করে আপু বলল, "চল, আজকে বাজার থেকে একটু চিতই পিঠা খেয়ে আসি। অনেক দিন খাওয়া হয়নি!" আমি তো দারুণ খুশি। সত্যি বলতে কি, এই ব্যস্ত শহরে কাজ আর ক্লান্তির ফাঁকে যদি এমন একটু ঘরোয়া স্বাদের কিছু পাওয়া যায়, তার চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে?

বাজারে পৌঁছানোর পর প্রথমেই চোখে পড়ল লাল, নীল, সবুজ টিপ পরা হাস্যোজ্জ্বল একজন মহিলা পিঠা বানাচ্ছেন। তার পাশেই বসে আরেকজন নানা রকম ভর্তা তৈরি করছেন। ছোট ছোট কৌটায় সাজানো ভর্তাগুলোর গন্ধেই মন ভরে যায়—আলু ভর্তা, ডাল ভর্তা, শুঁটকি ভর্তা, বেগুন ভর্তা, টমেটো ভর্তা—যার প্রতিটাই যেন স্বাদের এক নতুন জগত। আমরা দুজনেই অর্ডার করলাম গরম গরম চিতই পিঠা আর সাথে পাঁচ রকম ভর্তা। পিঠাগুলো ছিল একদম ফ্রেশ, মোটা মোটা এবং দারুণ নরম। চিতই পিঠা একাই ভালো লাগে, কিন্তু যখন তার সাথে থাকে মাটির সসের কৌটায় পরিবেশিত ভর্তা আর সরিষা তেল—তখন সে হয়ে ওঠে এক পরিপূর্ণ গ্রামীণ উৎসব।

শুরু করলাম আলু ভর্তা দিয়ে। মসৃণভাবে মাখানো আলু, সরিষার তেল, কাঁচা মরিচ আর পেঁয়াজের সংমিশ্রণ—স্বাদে যেন মায়ের হাতের ঘ্রাণ। এরপর খেলাম শুঁটকি ভর্তা। অনেকে শুঁটকির গন্ধে নাক সিটকায়, কিন্তু যারা একবার সত্যিকারের ভালোভাবে তৈরি শুঁটকি ভর্তা খেয়েছেন, তারা জানেন এর স্বাদ কতটা গভীর হতে পারে। একটু ঝাল, একটু টক আর সাথে ধোঁয়া ওঠা চিতই—স্বাদে যেন লুকিয়ে গ্রাম বাংলার আত্মা। চিতই পিঠা আর ভর্তায় যখন মন ভরে গেছে, ঠিক তখনই পাশের দোকান থেকে গন্ধ এলো চিজ আর চিকেনের। দেখি, একেবারে লোকাল স্টাইলে তৈরি করা পিজ্জা বিক্রি হচ্ছে পাশের দোকানে। দামও অনেক সাশ্রয়ী—তুলনায় স্বাদ কিন্তু কোনোভাবেই কম নয়।

অপুর্বভাবে বানানো লোকাল ওভেন বেইকড পিজ্জা। মোজারেলা চিজের সাথে চিকেন টপিং, কিছুটা ক্যাপসিকাম আর মাশরুম—সবকিছু মিলিয়ে একেবারে নতুন অভিজ্ঞতা। ঢাকা শহরের বড় বড় রেস্তোরাঁর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে এমন স্বাদ, অথচ এমন সহজপ্রাপ্য! খিলগাঁও তালতলা সিটি সুপার মার্কেট শুধু বাজার করার জায়গা নয়, এটা হয়ে উঠেছে আমাদের নিত্যদিনের জীবনের অংশ। এখানকার পিঠাওয়ালা আপা, ভর্তাওয়ালা ভাই বা সেই পিজ্জা বানানো তরুণ—প্রতিটা মানুষ যেন একেকটা গল্পের বই। ওদের হাতে তৈরি খাবারগুলোও যেন শুধু স্বাদ নয়, বরং অনেক যত্ন, ভালোবাসা আর সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ।

পিঠা আমাদের দেশের ঐতিহ্যের একটি অমূল্য অংশ। আগে গ্রামে গ্রামে শীতকালে পিঠা খাওয়ার যে উৎসব ছিল, এখন শহরবাসী সেই অভিজ্ঞতা হারিয়ে ফেলেছে অনেকটা। কিন্তু এই তালতলার মতো জায়গাগুলো সেই ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে জীবন্তভাবে। আর সারা বছর ধরে পিঠা খাওয়ার সুযোগ—এটা শহরের জন্য সত্যিকারের সৌভাগ্য। বসে বসে খাওয়ার সময় আশপাশে থাকা মানুষের কথাবার্তাও কানে এলো। কেউ পিঠা খেতে খেতে ফোনে কথা বলছেন গ্রামের বাড়ির কারো সঙ্গে, কেউ বা বন্ধুর সঙ্গে হাসতে হাসতে ভাগ করে নিচ্ছেন শেষ পিসটা। সবার মাঝেই একটা শীতল, ঘরোয়া আনন্দ। এত ব্যস্ত, এত ব্যস্ত এই শহরেও যদি এমন কিছু মুহূর্ত থাকে—তাহলে হয়তো জীবনকে একটু সহজভাবে নেওয়া যায়। আমার আর আপুর সেই দিনের ছোট্ট এই ভ্রমণ একরকম মানসিক মুক্তির মতো ছিল। পিঠা, ভর্তা, পিজ্জা—সব মিলিয়ে যেন এক মিনি ফুড ফেস্টিভ্যাল, তাও নিজের বাসার সামনে! তালতলা সিটি সুপার মার্কেটের সামনে থাকা এই চিতই পিঠা আর ভর্তার দোকানটা আমাদের এলাকার এক অমূল্য রত্ন। প্রতিদিন হাজারো মানুষ এখানে আসে বাজার করতে, কিন্তু যারা জানে না এই ছোট্ট স্টলের গল্প, তারা মিস করছে বিশাল কিছু। এটাই সেই জায়গা, যেখানে আপনি এক প্লেট চিতই পিঠার সাথে পেয়ে যাবেন নস্টালজিয়া, আর এক টুকরো লোকাল পিজ্জার মধ্যে খুঁজে পাবেন শহরের প্রাণ। পরেরবার খিলগাঁও তালতলায় এলে, বাজারের ভিড়ের মাঝে একটু সময় নিয়ে চিতই পিঠা খেয়ে যান। আপনার মুখে যেমন হাসি ফুটবে, তেমনি মনও ভরে উঠবে আমাদের দেশের খাবারের অনন্য ঐতিহ্যে।
কেমন হয়েছে আজ আমার লাইফ স্টাইল পোস্টটি। আশা করছি আপনাদের সবার কাছে আমার পোস্টটি পড়েও অনেক ভালো লেগেছে। সবাই ভালো ও সুস্থ থাকবেন সে পর্যন্ত আগামীতে আবার নতুন ব্লগ নিয়ে আপনাদের মাঝে চলে আসবো ইনশাল্লাহ। আল্লাহ হাফেজ।
