আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন আমার প্রিয় সহযাত্রী ভাই বোনেরা? আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের সবার দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। আশা করি সবার দিনটা ভাল কেটেছে। আজকে আপনাদের সবার মাঝে আমার আরও একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। আজ আমি একটি ফটোগ্রাফি পোস্ট নিয়ে আপনাদের সবার মাঝে হাজির হয়েছি।আশা করি আপনাদের সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে। তাহলে চলুন আজ আমার ফটোগ্রাফি গুলো দেখে আসি কেমন হয়েছে।

শহরের যান্ত্রিক কোলাহল আর ব্যস্ততা থেকে পালিয়ে কয়েকদিন নিজের ও প্রিয়জনের সাথে সময় কাটানো—এই ইচ্ছে থেকেই আমাদের মাওয়া ভ্রমণের পরিকল্পনা। আমি আর আমার আপুরা মিলে একসাথে বেরিয়ে পড়েছিলাম এক চিলতে শান্তি আর নতুন কিছু দেখার আশায়। সেই যাত্রাপথে শুধু গন্তব্য নয়, বরং প্রতিটি মোড়, প্রতিটি গাছ, এমনকি আকাশের রংও আমাদের কাছে হয়ে উঠেছিল অসাধারণ এক ফটোগ্রাফির মুহূর্ত।


সকালবেলা আমরা বের হলাম ঢাকার ব্যস্ততা পেছনে ফেলে। ব্যাগে ছিল পানির বোতল, হালকা কিছু স্ন্যাকস, আর অবশ্যই আমাদের মোবাইল ও ক্যামেরা। রোদের আলো তখন তেমন তীব্র হয়নি, আর আকাশ ছিল তুলোর মতো হালকা মেঘে ঢাকা। মাওয়ার দিকে যেতে যেতে রাস্তার দু’পাশে প্রকৃতি যেন চোখে ধরা দিচ্ছিল নতুন এক রূপে।গাড়ির জানালা দিয়ে তাকিয়ে মনে হচ্ছিল, পৃথিবী যেন একটু ধীরে ঘুরছে। সবুজ ঘাসে ঢাকা খোলা জমি, মাঝে মাঝে ফুটে থাকা রঙিন বুনো ফুল, আর দূরে দূরে ছায়াময় গাছের সারি—সব মিলে পথটাই যেন হয়ে উঠেছিল মূল গন্তব্য।

আমাদের ক্যামেরায় প্রথম যে ছবিটি ধরা পড়ে, সেটা ছিল এই পথের একটা অংশ, যেখানে কয়েকটি ফুলগাছে হালকা গোলাপি ও গাঢ় লাল ফুল ফুটে আছে। তার পেছনে সবুজ টিলা, নীলচে আকাশ আর বিদ্যুতের তারগুলো যেন একটা বাস্তবতা ও সৌন্দর্যের মিশ্র ছাপ রেখেছে। এই ছবিটি তুলতে গিয়েই আমি কিছুক্ষণ থমকে যাই। মনে হচ্ছিল, কত দ্রুতই না আমরা জীবনের এই ছোট ছোট সৌন্দর্যগুলো উপেক্ষা করে যাই। অথচ এই ফুলগুলো, এই গাছগুলো, এই রাস্তা—সব কিছুই প্রতিদিন আমাদের চোখের সামনে থাকলেও আমরা তার সৌন্দর্য অনুধাবন করি না।

এই ভ্রমণটা ছিল শুধু জায়গা দেখা নয়, বরং সম্পর্কগুলোকে আরও গভীরভাবে অনুভব করার সুযোগ। আমরা তিন বোন একসাথে এতটা নির্ভার হয়ে অনেকদিন পর সময় কাটালাম। পথে গান গাওয়া, গল্প করা, হঠাৎ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে তাজা আখের রস খাওয়া—সবকিছুই যেন ছোট ছোট সুখের টুকরো হয়ে হৃদয়ে জমা হচ্ছিল।আমার আপুরা নিজেরাও ফটোগ্রাফি ভালোবাসে। ওদের চোখে রাস্তার মোড় বা একখণ্ড খালি জমিও ছিল ফ্রেমের উপযোগী। ফলে আমরা যখন ছবি তুলছিলাম, তখন একেকজনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে একেক ধরনের শট মিলছিল। কিছু ছবি ফুলের, কিছু শুধু গাছের ছায়া, আবার কিছু রাস্তার বাঁকের।

এই ছবিতে যেমন দেখা যায়, প্রাকৃতিক দৃশ্যের পাশাপাশি বিদ্যুতের তার, লোহার রেলিং, আর পিচঢালা রাস্তা—সব মিলে আধুনিকতা ও প্রকৃতির সহাবস্থান যেন চোখে পড়ে। এটাও ছিল আমাদের আলোচনার বিষয়। আমরা নিজেরাও বুঝতে পারছিলাম, উন্নয়ন আর প্রকৃতি একসাথে কিভাবে টিকে থাকতে পারে—শুধু প্রয়োজন কিছু যত্ন আর দায়িত্ববোধ। আমার কাছে ফটোগ্রাফি শুধুই ছবি তোলা নয়—এটা সময় ধরে রাখার একটা উপায়। এই ভ্রমণে প্রতিটি ছবির পেছনে ছিল একটা গল্প, একটা অনুভূতি। কখনো তা ছিল নিঃশব্দ প্রকৃতির প্রতি বিস্ময়, কখনো ভালোবাসার বন্ধন, আবার কখনো পুরনো দিনের স্মৃতির সাথে মেলানো নতুন মুহূর্ত।


এই ছবিটি, যেখানে গাছের পেছনে দেখা যাচ্ছে খোলা আকাশ আর সবুজ টিলা—এই দৃশ্যটা আমি মনে রাখবো বহুদিন। কারণ ছবির মধ্যে আমি শুধু একটি রাস্তার পাশের গাছ দেখিনি, দেখেছি ভ্রমণের এক অবিস্মরণীয় ক্ষণ।যখন আমরা মাওয়া পৌঁছালাম, তখন প্রকৃতির সৌন্দর্য আরও বিস্তৃত হয়ে ধরা দিল আমাদের চোখে। কিন্তু তবুও পথের সেই ছোট ছোট দৃশ্যগুলোর আবেদন একটুও কম ছিল না। বরং পথের অভিজ্ঞতাগুলোই গন্তব্যকে আরও বিশেষ করে তোলে।

এই ব্লগের মাধ্যমে আমি সেই ছবিগুলো ও অনুভূতিগুলো আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাইলাম। আশা করি, আপনাদের মাঝেও কিছুটা হলেও সেই দিনের শান্তি আর সৌন্দর্য ছড়িয়ে দিতে পেরেছি।
ভ্রমণ মানেই শুধু দূরে কোথাও যাওয়া নয়, বরং প্রতিটি পথ, প্রতিটি থেমে যাওয়া, প্রতিটি দৃশ্য আমাদের জীবনের গল্পের অংশ হয়ে ওঠে। আর ফটোগ্রাফি সেই গল্পগুলোকে ধরে রাখে চিরকালের জন্য। আজকের এই লেখা সেই পথের গল্প, সেই ছবি আর অনুভূতির এক ক্ষুদ্র স্মারক।
বিষয় | ফটোগ্রাফি |
---|---|
ডিভাইস | Oppo-A16 |
ফটোগ্রাফার | @mahfuzanila |
ভৌগলিক অবস্থান | বাংলাদেশ |