জেনারেল রাইটিং:-" অর্থ আর ক্ষমতা: যখন চেনা মুখ অচেনা হয়ে যায় " II written by @maksudakawsar II

কেমন আছেন সবাই? আশা করবো সবাই ভালো আছেন। সৃষ্টিকর্তার রহমতে আমিও আছি ভালোই। তবে ব্যস্ত এ নগরে কতটুকু সময় ভালো থাকতে পারবো সেটা বলা মুশকিল। শত ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে কাটাতে হয় যান্ত্রিক জীবন। মাঝে মাঝে মনে হয় সব কিছুকে বন্ধ করে দিয়ে দূরে কোথাও সবুজ গাছের ছায়ায় নিজেকে একটু স্বস্থির ছায়া দিতে। কিন্তু ঐ যে বাস্তবতা, সেটা তো বড়ই নিষ্ঠুর আর নির্মম। কোন কিছুতেই ছাড় দিতে চায় না। সে যাই হোক বাবা । চলুন মূল পোস্টে ফিরে যাওয়া যাক।

প্রতিদিনই চেষ্টা করি আপনাদের মাঝে সুন্দর করে কিছু লিখে উপহার দেওয়ার জন্য। চাই চারদিকের মানুষগুলোর মধ্যে লুকিয়ে থাকা কষ্টগুলো কে আমার লেখার যাদুতে আপনাদের মাঝে তুলে ধরতে। জানিনা কতটুকু আপনাদের মাঝে নিজের মনের কথা গুলো কে শেয়ার করতে পারি। আজ চেষ্টা করলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি জেনারেল রাইটিং শেয়ার করার জন্য। আশা করি প্রতিদিনের মত করে আমার আজকের জেনারেল রাইটিংটিও আপনাদের কাছে বেশ ভালো লাগবে।

source

মানুষ সামাজিক জীব। আমরা একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠাই—বন্ধুত্ব, আত্মীয়তা, সহানুভূতি কিংবা ভালোবাসার বন্ধনে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এসব সম্পর্কের রঙ বদলাতে পারে। বিশেষ করে যখন কারো জীবনে হঠাৎ অর্থ বা ক্ষমতার আগমন ঘটে, তখন তার চারপাশের পরিচিত মুখগুলো যেন একে একে বদলে যেতে থাকে। যাদের ভালোবাসা বা বন্ধুত্ব একসময় নিঃস্বার্থ মনে হতো, তারা অনেক সময় হিসেব-নিকেশে ভরা হয়ে ওঠে।

যখন কেউ ধীরে ধীরে সফলতা অর্জন করে, তখন তার জীবনে নানা ধরণের মানুষ আসতে শুরু করে। কিছু আসে সৎ ইচ্ছা নিয়ে, আবার কেউ আসে নিজের স্বার্থ হাসিল করতে। অথচ সেই মানুষটিই হয়তো এক সময় আর্থিক সংকটে ভুগছিল, যার পাশে খুব অল্প কিছু মানুষ ছিল। তখনকার সেই ‘কঠিন সময়ের সাথীরা’ হয়তো চুপচাপ সাহায্য করত, কোনো বিনিময়ের আশা না করেই। কিন্তু যখন ভাগ্য ঘুরে যায়, তখন যেন সবাই তার ‘ঘনিষ্ঠ’ হয়ে ওঠে। এই দৃশ্যটা যেন খুব পরিচিত—বিশেষ করে যারা নিজের পরিশ্রমে জীবনে একটু উপরে উঠেছেন, তারা জানেন অর্থ ও ক্ষমতার আলোয় চেনা মুখগুলো কেমন করে বদলে যায়।

আসলে সম্পর্কের আসল চেহারা বোঝা যায় তখনই, যখন আমাদের জীবনে বড় কোনো পরিবর্তন আসে। এটা হতে পারে সাফল্য, অর্থ, ক্ষমতা কিংবা খ্যাতি। অনেকে তখন হঠাৎ আপন হতে চায়, আবার অনেক আপনজন হয়তো দূরে সরে যায়—হিংসা, অহংবোধ কিংবা ঈর্ষায়। জীবনের কঠিন সময়ে যারা আমাদের পাশে থাকে, তারাই প্রকৃত আপন। কিন্তু যখন আমরা ভালো থাকি, তখন এমন অনেকেই আসে যারা শুধু সুবিধা নিতে চায়। তারা মিষ্টি কথায় মন ভোলানোর চেষ্টা করে, অথচ ভিতরে ভিতরে গড়তে থাকে স্বার্থের দেয়াল। এমনকি অনেকে আপনার সফলতাকে নিজের সফলতার অংশ হিসেবে প্রচার করে বেড়ায়, যেন আপনাকে চিনে থাকাটা তার একধরনের গর্বের বিষয়!

অর্থ এবং ক্ষমতা অনেক কিছু এনে দেয়—সুখ-সুবিধা, সম্মান, পরিচিতি। কিন্তু একই সাথে এটি একটি বড় পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় ধরা পড়ে যায় কারা সত্যিকারের বন্ধু, আর কারা ছিল শুধু সুযোগসন্ধানী। সমাজে এমন অনেক উদাহরণ আছে যেখানে কেউ ধনী বা প্রভাবশালী হওয়ার পর আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব এমনকি প্রতিবেশীরাও আচরণ পাল্টে ফেলেছে। এই আচরণের মূল কারণ হলো—মানুষ অনেক সময় নিজের সুবিধাকে বেশি প্রাধান্য দেয়। তারা ভাবে, “এই মানুষটির এখন টাকা আছে, তাহলে তার কাছ থেকে কিছু পাওয়া যাবে।” কেউ হয়তো চাকরির জন্য ফোন করে, কেউ চায় লোনের সুপারিশ, কেউ আবার সামাজিক মর্যাদায় নিজের স্থানটা বাড়িয়ে নিতে চায় এই সম্পর্ক দিয়ে।

সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো—যারা একসময় হৃদয়ের খুব কাছের ছিল, তাদের পরিবর্তিত আচরণ মেনে নেওয়া কঠিন হয়। একটা সময় ছিল, যখন তারা ছিল সুখ-দুঃখের সাথী। কিন্তু আজ তারা হয়তো শুধুই এক নাম, এক স্মৃতি। এই ভাঙন মনের ভেতর গভীর ক্ষত তৈরি করে। অনেকে তখন একাকীত্বে ভোগেন। তাদের চারপাশে অনেক মানুষ থাকলেও, কেউই আসল বন্ধু নয়। এই পরিস্থিতি একজন মানুষকে আত্মসমালোচনায় ডুবিয়ে দেয়—সে ভাবে, “আমি কি ভুল করেছি? নাকি মানুষ এমনই?” কিন্তু বাস্তবতা হলো, টাকা-পয়সা বা প্রভাবশালী হয়ে ওঠা মানুষকে নয়, তার চারপাশের মানুষের মুখোশগুলো খুলে দেয়।

অর্থ ও ক্ষমতা জীবনের প্রয়োজনীয় অংশ। এগুলোর মাধ্যমে আপনি অনেক কিছু অর্জন করতে পারবেন, কিন্তু সম্পর্কের সত্যতা যাচাই করার জন্য এই দুইটি সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার নাম। সফলতার আলোয় চেনা মুখগুলো যখন অচেনা হয়ে যায়, তখন নিজেকে শক্ত রাখুন। কারণ আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন অর্থ বা ক্ষমতা নয়—বরং তারা যারা আপনাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসে, এবং সেই ভালোবাসা কখনো বদলায় না।