আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই? আশা করবো সবাই ভালো আছেন সৃষ্টিকর্তার রহমতে । আমিও আছি আপনাদের দোয়ার বরকতে জীবন নিয়ে ভালোই। তবে কেন জানি আজকাল ব্যস্ততাগুলো আমায় দারুন প্যারা দিচেছ। প্যারা দিচ্ছে জীবন আর সময় দুটোই। কিন্তু আমি তো ব্যস্ততা চাই না। চাই একটু শান্তি আর প্রশান্তি। চাই একটু স্বাধীনতা। যাই হোক এসব কথা বলে শুধু শুধু সময় নষ্ট করে লাভ নেই। তাই চলে যাই আজ আপনাদের জন্য আমার লেখা সুন্দর গল্পে। যা কিনা বাস্তব জীবেন থেকে সংগ্রহ করা।
প্রতিদিনই চেষ্টা করি আমি আপনাদের মাঝে সুন্দর করে কিছু লিখে উপহার দেওয়ার জন্য। চাই চারদিকের বাস্তব কিছু ঘটনাকে গল্পে রূপ দিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে। যাতে করে আমার লেখার যাদুতে আপনারা মুগ্ধ হতে পারেন। যদিও সময় করে উঠতে পারি না। যদিও নিজের ক্রেয়েটিভিটি আপনাদের মাঝে তুলে ধরার সময় হয় না। তবুও চেষ্টা করলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য। আশা করি প্রতিদিনের মত করে আমার আজকের জেনারেল গল্পটিও আপনাদের কাছে বেশ ভালো লাগবে।

Image created- maksuda kawsar, with AI Tools)
আজ ছুটির দিন। অথচ মায়ার ঘরে কোনো আনন্দ নেই, বাইরে যাওয়ার কোনো তাড়া নেই। বৃষ্টি হচ্ছে টুপটাপ। জানালার পাশে বারান্দায় বসে সে চুপ করে আছে। হাতের মগে কফি ছিল, এখন ঠান্ডা হয়ে গেছে। ঠোঁটে তোলা হয়নি একবারও। চোখে শুধুই তাহসানের ছবি—অদৃশ্য অথচ স্পষ্ট। মায়া অনেক সময়ই ভাবে, তাহসান কি আদৌ জানে, সে আজও কফি খায় বারান্দায়, সেই খালি চেয়ারের পাশে বসে? যেখানে এক সময় তাহসান বসত। তাদের পরিচয় হয়েছিল হঠাৎ, কিন্তু অদ্ভুত এক টান ছিল সেখানে।
মায়া তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষে। নিঃসঙ্গতা আর বইয়ের মধ্যে তার দিন কেটে যেত। একদিন ফেসবুকে একটা অনলাইন বুক ক্লাবের পোস্টে চোখ পড়ে। সাহিত্যের আলোচনা, কবিতা, গল্প—সব কিছু মিলিয়ে তার খুব ভালো লাগে। সেই ক্লাবেই একদিন একটা বইয়ের রিভিউতে তাহসান কমেন্ট করেছিল। "কবিতা যখন হৃদয়ের পাশে বসে থাকে, তখন শব্দ কম লাগে।" মায়া উত্তরে লিখেছিল, "তবে ভালোবাসার পাশে বসলে তো আর শব্দই থাকে না।" সেখান থেকেই শুরু। ইনবক্সে কয়েকটা মেসেজ, তারপর দীর্ঘ রাত জেগে গল্প। তাহসান ছিল ভিন্নধর্মী। সে খুব কম কথা বলত, কিন্তু যখন বলত, তার কথায় আবেগ থাকত। যেন প্রতিটা শব্দ ভাবনা থেকে ফোটে। তারা ধীরে ধীরে একে অপরকে খুঁজে পায়।
তাদের প্রথম দেখা হয়েছিল বাংলা একাডেমির বইমেলায়। মায়া প্রথমে একটু লজ্জা পেয়েছিল, কিন্তু তাহসান ছিল শান্ত, হাসিমুখের একজন। দুজনেই হেঁটেছিল বইয়ের স্টলে স্টলে, বইয়ের গন্ধে ডুবে গিয়েছিল। তারপর থেকে প্রায়ই দেখা হতো। সবচেয়ে বেশি যেটা মনে পড়ে মায়ার—তাহসান আর সে বৃষ্টির দিনে বারান্দায় বসে কফি খেত। মাঝে মাঝে শুধু বৃষ্টি দেখত, কিছু না বলে। সেই নীরবতা ছিল সবচেয়ে আরামদায়ক ভাষা। তাহসান বলত, “ভালোবাসা কখনো জোর করে হয় না। এটা আসে ধীরে ধীরে, বৃষ্টির মতো—অভ্যস্ত করে দেয়া ছাড়া আর কিছু না।” মায়া সেই বৃষ্টিতে ভিজেছিল পুরোটা হৃদয় দিয়ে।
একদিন, হঠাৎ তাহসান বলেছিল, “মায়া, আমার ভেতরে এক ধরনের দুঃখ আছে, যেটা হয়তো তোমাকে ব্যথা দেবে।” মায়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, “তুমি কেন এমন বলছো?” তাহসান চোখ নামিয়ে বলেছিল, “আমি জানি না আমি তোমার পাশে থাকতে পারব কিনা। আমার পরিবার চায় ভিন্ন কিছু। তারা সবসময় আমার সিদ্ধান্তের বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকে।” মায়া বলেছিল, “তুমি যদি আমাকে ভালোবাসো, তাহলে একসাথে লড়ব।” তাহসান চুপ করে ছিল। কয়েকদিন পর, মায়াকে সে দেখা করতে বলল। সেই একই বারান্দায়, বৃষ্টির দিনে। তাহসান বলেছিল, “আমি তোমাকে ভালোবাসি, কিন্তু আমি দুর্বল। আমার ভয় হয়—তোমাকে নিয়ে আমি পারব তো?” মায়া প্রশ্ন করেছিল, “তবে কেন এই শুরু?” তাহসান কাঁপা কণ্ঠে বলেছিল, “কারণ, তোমাকে না ভালোবেসে থাকা সম্ভব না।” সেই দিনই ছিল তাদের শেষ দেখা।
পরদিন তাহসান আর কোনো খোঁজ দেয়নি। মায়া শুধু পেয়েছিল একটি খাম। ভেতরে ছিল তাহসানের হাতে লেখা এক চিঠি: “মায়া, ভালোবাসা সব সময় মিলেই যায় না। আমি তোমার জীবনে থাকতে পারছি না—তাতে দোষ আমার। কিন্তু তুমি আমার হৃদয়ের বারান্দায় চিরকাল থাকবে। তুমি জানো তো, কিছু প্রেম বৃষ্টির মতো—ভিজিয়ে দেয়, কিন্তু রোদ আসলে অদৃশ্য হয়ে যায়। আমি বৃষ্টি হয়ে গিয়েছি, মায়া —তাহসান” মায়া চিঠিটা বুকের ওপর রেখে কেঁদেছিল সেই রাতে।
আজ অনেক বছর পেরিয়ে গেছে। তাহসানের কোনো খোঁজ নেই। সে কোথায়, কেমন আছে, মায়া জানে না। তবে একটুও ভুলে যায়নি তাকে। প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরে মায়া বারান্দায় বসে। এক কাপ কফি হাতে। পাশে খালি চেয়ার। বৃষ্টি হলে সেই স্মৃতির জানালা খুলে যায়। তাহসানের চোখ, কথাগুলো, সেই চিঠির অক্ষর—সব ভেসে ওঠে। কখনো কখনো তার খুব জানতে ইচ্ছে করে— “তাহসান, তুমি কি জানো, আমি এখনো তোমাকে ভালোবাসি?” “তুমি কি জানো, এখনো সেই কফির কাপ ঠান্ডা হয়ে যায়, কারণ আমার অপেক্ষা শুধু তোমার জন্য?” বারান্দার রেলিংয়ে বৃষ্টির ফোঁটা জমে ওঠে। যেন মায়ার চোখের জল ছুঁয়ে ফেলা অসমাপ্ত ভালোবাসা।
কেউ জানে না, এই শহরের মাঝে এক নারী প্রতিদিন বসে থাকে তার শেষ ভালোবাসার স্মৃতিতে, এক কাপ কফি আর এক ফাঁকা চেয়ারের পাশে।
কেমন লাগলো আমার আজকের গল্পটি আপনাদের কাছে? জানার অপেক্ষায় রইলাম।
আমার পরিচিতি
আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।
.gif)
VOTE @bangla.witness as witness
OR
SET @rme as your proxy
