গল্প রাইটিং:- “তোমার অপেক্ষায়” II written by @maksudakawsarII

in hive-129948 •  4 days ago 

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন সবাই? আশা করবো সবাই ভালো আছেন সৃষ্টিকর্তার রহমতে । আমিও আছি আপনাদের দোয়ার বরকতে জীবন নিয়ে ভালোই। তবে কেন জানি আজকাল ব্যস্ততাগুলো আমায় দারুন প্যারা দিচেছ। প্যারা দিচ্ছে জীবন আর সময় দুটোই। কিন্তু আমি তো ব্যস্ততা চাই না। চাই একটু শান্তি আর প্রশান্তি। চাই একটু স্বাধীনতা। যাই হোক এসব কথা বলে শুধু শুধু সময় নষ্ট করে লাভ নেই। তাই চলে যাই আজ আপনাদের জন্য আমার লেখা সুন্দর গল্পে। যা কিনা বাস্তব জীবেন থেকে সংগ্রহ করা।

প্রতিদিনই চেষ্টা করি আমি আপনাদের মাঝে সুন্দর করে কিছু লিখে উপহার দেওয়ার জন্য। চাই চারদিকের বাস্তব কিছু ঘটনাকে গল্পে রূপ দিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে। যাতে করে আমার লেখার যাদুতে আপনারা মুগ্ধ হতে পারেন। যদিও সময় করে উঠতে পারি না। যদিও নিজের ক্রেয়েটিভিটি আপনাদের মাঝে তুলে ধরার সময় হয় না। তবুও চেষ্টা করলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য। আশা করি প্রতিদিনের মত করে আমার আজকের জেনারেল গল্পটিও আপনাদের কাছে বেশ ভালো লাগবে।

image.png

Image created- maksuda kawsar, with AI Tools)

ঢাকার একটা ছোট্ট কোণে, এক সাদাসিধে বাড়িতে থাকত রাহাত। তার জীবনটা ছিল শান্ত—চুপচাপ, বইপড়া আর নিঃশব্দ ভালোবাসার এক নিদর্শন। ছোটবেলা থেকে সে অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা—বেশিদিন কথা বলত না, হাসত কম, কিন্তু ভালোবাসা তার হৃদয়ে গাঁথা ছিল গভীর। রাহাতের জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ ছিল নওরিন। তাদের পরিচয় হয়েছিল ক্লাস নাইনে, যখন তারা একই বেঞ্চে বসত। প্রথমে শুধু স্বাভাবিক বন্ধুত্ব—স্কুলের পড়াশোনা, পরীক্ষা প্রস্তুতি, আর ফাঁকে ফাঁকে স্কুল থেকে ফেরার পথে ছোট ছোট গল্প। ধীরে ধীরে সেই বন্ধুত্ব গভীর হয় এক অদ্ভুত প্রেমে—যা বলা হয়নি, শুধু চোখে চোখে বুঝিয়ে দেওয়া হতো। নওরিন ছিল জীবনের উজ্জ্বল এক রোশনাই। তার মুখে চির হাসি, চোখে মিষ্টি কথা আর কথায় যেন ভাসত ফুলের গন্ধ। আর রাহাত ছিল শান্ত নদীর মতো, নিঃশব্দ, গভীর। সে কথা বলত না বেশি, কিন্তু তার ভালোবাসা ছিল বিশুদ্ধ, অটুট।

কিন্তু জীবনের গল্প সব সময় মধুর হয় না। একদিন স্কুল শেষে, নওরিন কিছু একটা বলতে চেয়েছিল। তার চোখে মিশ্রিত হয়েছিল অবিশ্বাস আর দুঃখ। সে বলল, “রাহাত, আমি আর থাকব না এখানে। আমার বাবা চাকরির বদলিতে কানাডায় চলে যাচ্ছেন, পুরো পরিবার নিয়ে।” রাহাত হঠাৎ থমকে গেল। তার হৃদয় যেন মুহূর্তে থেমে গিয়েছিল। সে কিছু বলতে পারল না, শুধু মৃদু করে মাথা নিচু করল। “তুমি আমার প্রিয় বন্ধু,” নওরিন ধীর গলায় বলল, “ভুলে যেও না, প্লিজ।” পরদিন থেকে স্কুলে যাওয়া হয়ে উঠল দুঃস্বপ্নের মতো। সে সেই খালি টেবিলের চেয়ারে বসে থাকত, যেখানে নওরিনের জন্য একটা জাগা ছিল। চোখ হারাত দূর আকাশের দিকে, যেন নওরিন ফিরে আসবে।

একদিন সাহস করে রাহাত একটি চিঠি লিখল। চিঠিতে ছিল তার অন্তরের কথা—“তোমার জন্য দোয়া করি, ভালো থেকো।” চিঠিটি সে পাঠাল নওরিনকে। তিন মাস কেটে গেল। একদিন তার হাতে এল একটি ছোট্ট চিঠি। সে খুলে পড়ল—“তোমাকে মনে পড়ে। কানাডায় বরফ পড়ে, কিন্তু তুমিই এখনো আমার সবচেয়ে উষ্ণ স্মৃতি।”সেই চিঠি পড়ে রাহাতের হৃদয় ভরে উঠল। তবে তারপর থেকে আবার ফিরে এল দীর্ঘ নিরবতা।
রাহাত বড় হয়েছে। এখন সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র। সে পড়াশোনায় মন দিয়েছে, কিন্তু নওরিনের কথা মনে পড়া থেমে না। ফেসবুকে নওরিনের প্রোফাইল প্রায় প্রতিদিন খুঁজে দেখে। তার নতুন ছবি, নতুন পোস্ট দেখে হাসে, কাঁদে, কিন্তু নিজে কোনো মন্তব্য করে না। একবার সাহস করে ইনবক্সে একটি মেসেজ পাঠিয়েছিল, “আমি এখনো সেই আগের মতই আছি।” কিছুদিন পরে কোনো উত্তর পায়নি। তবুও মনে মনে অপেক্ষা করে, হয়তো একদিন নওরিন ফিরে আসবে।

রাহাত প্রতিদিন যাতায়াত করে শহরের ব্যস্ত রাস্তায়, তখনই সে যায় সেই পুরনো ট্রেনস্টেশনের পাশ দিয়ে, যেখানে একসময় তারা দু’জনে মেলায় যেত। ট্রেনের শব্দ, প্লেনের গর্জন—সবই যেন তার মনে করিয়ে দেয় অতীতের সেই দিনগুলো। একদিন আকাশে প্লেন উড়ে যাচ্ছে। রাহাত ভাবল, হয়তো একদিন এই প্লেনের কোনো এক যাত্রীর মাঝে নওরিন ফিরে আসবে তার জীবনে। সে জানে, কিছু অপেক্ষা শেষ হয় না। কিছু ভালোবাসা শব্দ ছাড়া, নিঃশব্দ থেকেও চিরজীবী হয়।

রাতের অন্ধকারে ঘুমানোর আগে, রাহাত বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের তারা গুলো দেখে। তার চোখে আবার ভেসে ওঠে নওরিনের হাসি, তার কথা। সে মনে মনে বলে—“নওরিন, তুমি যেখানেই থাকো, আমি তোমার অপেক্ষায় আছি। আমার ভালোবাসা তোমার জন্য চিরন্তন।” তার সেই অপেক্ষার গল্প হয়তো কারো জানা নেই, কিন্তু তার হৃদয়ে সেই ভালোবাসার জোনাকির আলো এখনও জ্বলজ্বল করছে

কেমন লাগলো আমার আজকের গল্পটি আপনাদের কাছে? জানার অপেক্ষায় রইলাম।

আমার পরিচিতি

আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।


3W72119s5BjVs3Hye1oHX44R9EcpQD5C9xXzj68nJaq3CeF5StuMqDPqgYjRhUxqFbXTvH2r2mDgNbWweA4YGBo825oLh4oqEqeynn5EZL11LdCrppngkM (1).gif

VOTE @bangla.witness as witness

witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_proxy_vote.png

1000206266.png

1000206267.png

❤️❤️ধন্যবাদ সকলকে❤️❤️

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

image.png