আজ -৫য় আষাঢ় | ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | বর্ষাকাল |
আসসালামু-আলাইকুম। আদাব - নমস্কার। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, আশা করি সবাই ভাল আছেন।

চা আমার জীবনের সবচেয়ে আস্থাভরা সঙ্গী। অনেকেই হয়তো অবাক হবে—এক কাপ চা কীভাবে একজন মানুষের সঙ্গী হতে পারে? কিন্তু আমি জানি, আমার একাকীত্বের মুহূর্তে, আমার ক্লান্ত সন্ধ্যায়, বা কোনো ভালো লাগার সকালে — যাকে আমি বারবার পাশে পেয়েছি, সেটা এক কাপ চা-ই। সে কখনো উচ্চবাচ্য করেনি, কিন্তু তার উষ্ণতা দিয়েই বলে দিয়েছে — “আমি আছি, ঠিক পাশে।”
শিশিরভেজা সকালে যখন ঘুম ভাঙে, চারপাশে নিশ্চুপতা, তখন রান্নাঘরের হালকা শব্দের পরেই চায়ের সুগন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। সেই গন্ধে চোখ খুলে যায়, মনটা ফুরফুরে হয়ে ওঠে। মনে হয় — "আবার একটা নতুন দিন শুরু হলো, সঙ্গে আমার পুরোনো সঙ্গী।" জানালার পাশে বসে, এক হাতে চায়ের কাপ ধরা আর অন্য হাতে মুঠোফোনটা রেখে যখন আকাশের দিকে তাকাই, মনে হয়, এটাই তো শান্তি। এটাই সেই নিঃশব্দ ভালোবাসা, যা না থাকলে দিনটা শুরুই হতো না ঠিকভাবে।
সন্ধ্যাবেলা অফিস থেকে ফিরেও যখন ক্লান্ত দেহটা কিছুটা বিশ্রাম চায়, তখন একটা জিনিসের কথা মাথায় আসে—“এক কাপ চা হলে ভালো হতো।” সেই চা শুধু শরীর নয়, মনকেও জাগিয়ে তোলে। সেই চায়ের কাপে কখনো মিশে থাকে দিনের অবসাদ, কখনো একটুখানি সান্ত্বনা। চায়ের ধোঁয়ার ভেতর দিয়ে যেন দেখি নিজের অনেক না বলা গল্প, চাওয়া-পাওয়ার হিসেব। সেই মুহূর্তে আমি একা থাকলেও একা থাকি না, কারণ আমার চা থাকে পাশে।
চায়ের কাপে কখনো ভালোবাসার স্মৃতি থাকে, আবার কখনো অভিমানের রেশ। এমন দিন গেছে, যখন মন খুব খারাপ ছিল, চারপাশে কাউকে পাইনি — তখন চায়ের ধোঁয়ার মধ্যে হারিয়ে গিয়েছি। ফুসফুসে ঢুকেছে শুধু ধোঁয়া নয়, একটা ধৈর্য, একটা সহনশীলতা। চা যেন বলেছে, “সব ঠিক হয়ে যাবে, এক চুমুকে যদি না হয়, পরের চুমুকে ঠিক হবে।”
আমার জীবনের অনেক কথোপকথন শুরু হয়েছে এক কাপ চা দিয়ে। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, প্রিয়জনের সঙ্গে নীরব বসে থাকা, পরিবারের কাউকে বলার মতো কিছু না থাকা — এসবের মাঝেও চা থেকে গেছে। ওটাই ছিল বোঝাপড়ার সেতু, নিঃশব্দে সংযোগ তৈরি করে দেওয়া এক উষ্ণ স্পর্শ।
বৃষ্টির দিনে তো চায়ের গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। টিনের চালে ফোঁটা ফোঁটা শব্দ, জানালার কাঁচে জল জমা, আর আমি বসে আছি উষ্ণ এক কাপ চা হাতে। সেই চা যেন একেকটা চিন্তা ধুয়ে মুছে নিয়ে যায়, মনের খিঁচ ধরে থাকা জটগুলো আস্তে আস্তে খুলে দেয়। একাকীত্ব কিংবা শূন্যতা তখন আর ভয় লাগে না, কারণ আমি জানি, এই মুহূর্তে চা আছে আমার পাশে।
চা কখনো আমায় তাড়াহুড়ো করেনি, কখনো অভিযোগ করেনি, বরং আমাকে শিখিয়েছে অপেক্ষা করতে। কারণ চা তো গরম থাকতে থাকতে ঠাণ্ডা হয়, সেই সময়ে ধৈর্য জন্মায়। হয়তো এই ধৈর্যের মধ্যেই একটা জীবনের শিক্ষা আছে। চা যেন বলে — “সময় নাও, নিজেকে অনুভব করো, ধীরে চলো, শান্ত থাকো।”
অনেকেই ভাবে, একা চা খাওয়া মানে বিষণ্নতা। আমি বলি, একা চা খাওয়ার মানেই নিজের সঙ্গে সময় কাটানো। আমি চা খাই যখন আমি নিজেকে বুঝতে চাই, অনুভব করতে চাই। চা তখন হয় আয়না — যেখানে আমি নিজেকে দেখি, নিঃশব্দে।
এখনো সন্ধ্যা নামলে, ব্যস্ত শহরের কোলাহল পেরিয়ে, আমি ফিরে আসি আমার নির্জন কোণে — জানালার পাশে বসে এক কাপ চা হাতে নিই। বাইরের আলো-আঁধারি, মানুষের শব্দ, গাড়ির হর্ন — সবকিছু পেরিয়ে আমি আর আমার চা একটা অন্য জগতে হারিয়ে যাই। সেই জগতটা শুধুই আমার, যেখানে কোনো শব্দ নেই, শুধু অনুভব আছে।
তাই চা আমার আসমের সঙ্গী — আকাশের মতো অসীম, নীরব, কিন্তু পাশে থাকা। যে সঙ্গী কোনো দাবি করে না, শুধু নীরবে ভালোবাসে, জানে কিভাবে আমাকে ভালো রাখতে হয়।
This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit