এখানে আমাদের জীবনের কতটুকু নিশ্চয়তা⁉️

in hive-129948 •  6 months ago 

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।

হ্যালো বন্ধুরা, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভালো আছেন।হ্যাঁ, আমিও অনেক ভালো আছি।

আজকের দিনে নিশ্চয়তা নিয়ে ভাবতে গিয়ে গুলিস্তান ও নবাবপুরের কথা মনে পড়ে গেল। আজ সকাল ৯টায় বের হয়েছিলাম, আর বাসায় ফিরেছি রাত ১০টায়। দিনের পুরোটা সময় কেটেছে পুরান ঢাকার এই ব্যস্ত এলাকায়। আজ পুরান ঢাকার ইতিহাস বা ঐতিহ্য নিয়ে কিছু বলবো না, বরং বলবো এই এলাকার বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ে, যেখানে জীবন এক মুহূর্তের জন্যও নিশ্চয়তায় নেই।

এখানে আমাদের জীবনের কতটুকু নিশ্চয়তা⁉️

1000049337.jpg

Location
Device:Samsung A33 (5G)

পুরান ঢাকার নবাবপুর ও গুলিস্তান এলাকা অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এবং ব্যস্ত। এখানকার রাস্তা ও অলিগলি এতটাই সরু যে কখনো কখনো একজন মানুষের পক্ষে ঠিকভাবে হাঁটাও মুশকিল হয়ে পড়ে। রাস্তায় যানবাহনের চাপ, হকারদের ভিড়, এবং মানুষের চলাচলের কারণে পুরো এলাকাটি সবসময়ই বিশৃঙ্খল থাকে। তবে এখানকার সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হচ্ছে বিশৃঙ্খল বৈদ্যুতিক তারের জটলা।যখন নবাবপুরের গলিগুলো দিয়ে হাঁটছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল যেন আমরা বিশাল এক মাকড়সার জালের নিচে হাঁটছি। কিন্তু এটি কোনো সাধারণ মাকড়সার জাল নয়, এটি বৈদ্যুতিক তারের জট, যা বছরের পর বছর ধরে এখানে জমেছে। খুঁটিগুলোর সাথে অসংখ্য বৈদ্যুতিক, টেলিফোন ও কেবল টিভির তার ঝুলে আছে।এই তারগুলোর মাঝে অনেক পুরোনো, ক্ষতিগ্রস্ত ও ছেঁড়া অবস্থায় রয়েছে, যা যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।

এখানে একটি ছোট উদাহরণ দেই-একবার আমি নবাবপুর রোড ধরে হাঁটছিলাম, তখন হঠাৎ দেখি একটা বৈদ্যুতিক তার ঝুলে নেমে এসেছে, যা একজন পথচারীর গায়ে পড়ে গেল। সৌভাগ্যক্রমে সেটি বিদ্যুতায়িত ছিল না, কিন্তু এই ধরনের ঘটনা এখানে নিত্যদিনের ব্যাপার। গুলিস্তানের ফুটপাতে হেঁটে গেলেও আমাদের মাথার উপরের এই তারের জট আমাদের আশঙ্কার কারণ হয়ে থাকে।শুধু বৈদ্যুতিক তারই নয়, এখানে ছোটখাটো অগ্নিকাণ্ডও প্রায়শই ঘটে। বিভিন্ন দোকানের সামনে বৈদ্যুতিক সংযোগগুলোর কোনোরকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই ব্যবহার করা হয়। অনেক দোকান মালিকই নিজেদের মতো করে অবৈধ সংযোগ নিয়ে থাকেন, যার ফলে মাঝেমধ্যেই আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। কিছুদিন আগেও নবাবপুরে একটি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল, যেখানে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কারণে কয়েকটি দোকান পুড়ে যায়। অথচ এসব সমস্যার স্থায়ী সমাধানে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ে না।

এছাড়াও, এই এলাকার রাস্তাঘাটে প্রায়ই খোলা ম্যানহোল দেখা যায়। সামান্য অসতর্কতার কারণে যে কেউ দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন। সন্ধ্যার পর অনেক রাস্তা আলোকহীন হয়ে পড়ে, যার ফলে নিরাপত্তাহীনতার মাত্রা আরও বেড়ে যায়।একটি শহরের উন্নয়নের জন্য অবকাঠামোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু পুরান ঢাকার গুলিস্তান ও নবাবপুরের মতো এলাকাগুলোতে সেটার কোনো সঠিক ব্যবস্থা চোখে পড়ে না। এখানকার রাস্তা, ফুটপাত, বৈদ্যুতিক সংযোগ,সবকিছুই যেন এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে চলছে।

1000049344.jpg

তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়-এখানে আমাদের জীবনের কতটুকু নিশ্চয়তা? আসলে, আমাদের শহর ব্যবস্থাপনা যতদিন না পর্যন্ত আধুনিক ও নিরাপদ হবে, ততদিন এখানে জীবনের নিশ্চয়তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে। আমরা কি এই অব্যবস্থাপনার মধ্যে নিয়মিত ঝুঁকি নিয়ে চলতে থাকব, নাকি পরিবর্তনের জন্য জোরালো আওয়াজ তুলব? এটাই এখন আমাদের ভাবার বিষয়।

আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

standard_Discord_Zip.gif

আমার পরিচয়

1000024149.png

আমার নাম মোঃ ফয়সাল আহমেদ। আমি ঘোরাফেরা, লেখালেখি এবং ফটোগ্রাফি করতে ভালোবাসি। ভ্রমণের মাধ্যমে নতুন জায়গা ও সংস্কৃতি আবিষ্কার করতে আমার আনন্দ লাগে। বিভিন্ন মুহূর্ত ও দৃশ্যকে ক্যামেরার লেন্সে বন্দি করা আমার শখ। লেখালেখির মাধ্যমে আমি আমার ভাবনা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে ভালোবাসি। প্রকৃতির সৌন্দর্য, মানুষের জীবনধারা এবং ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার লেখার মূল অনুপ্রেরণা। আমি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করার চেষ্টা করি এবং সেগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখি। এসব অভিজ্ঞতা আমাকে নতুন করে জীবনকে দেখার অনুপ্রেরণা দেয়।

1000024154.png

1000024151.gif

Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

image.png

1000049349.jpg

এখানে জীবনের নিশ্চয়তা নেই বললেই চলে। দিনকে দিন পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। ঠিক এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির জন্য ঢাকাকে বসবাসের অযোগ্য শহর বলা হয়।
লিখনী ভালো ছিল 👌

ছবিগুলো দেখেই তো ভয় লাগছে। এত এত তার সংযোগের কারখানা এখানে যে কেউ যেকোনো মুহূর্তে বড় কোনো দুর্ঘটনার স্বীকার হতে পারে। আমি তো ভাবছি যারা এখানকার স্থানীয় তারা কিভাবে আতঙ্কের মধ্যে নিজেদের জীবন অতিবাহিত করছে। আসলে বাচ্চা বুড়ো সবার জন্য এটা অনেক বড় একটা রিস্ক।এর সঠিক ব্যবস্থাপনা না নিলে যে কোন সময় অনেক বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এবং নবাবপুর এবং গুলিস্তান এরিয়াটাই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

পুরান ঢাকার গুলিস্তান ও নবাবপুরে দেখতেছি কঠিন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আসলে উন্নত দেশ গঠনে এ সকল অবকাঠামো মোটেও কাম্য নয়। আপনি যে উদাহরণ দিলেন যদি ঐ সময় ঐ তারের মধ্যে বিদ্যুৎ থাকতো তাহলে যে লোকের গায়ে পড়েছিলো তাহলে তো ঐ লোকটির নির্ঘাত মৃত্যু ছিলো। যেহেতু এই শহরগুলি ঘনবসতিপূর্ণ এবং বেশ ব্যস্ত শহর তাই আমি মনে করি এই শহরের কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়গুলো নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। নচেৎ আগামীতে মানুষ অনেক বিপদের সম্মুখীন হবে।

শুধু পুরান ঢাকা গুলিস্তান বলে নয় ভাই, সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে এমন কারেন্টের এলোমেলো ব্যবস্থা সত্যি দুর্ভাগ্যজনক। যে কোন মুহূর্তে এমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এবার তো বর্ষার সময় আমাদের এখানে একটি গাছের পাশে কারেন্টের তারে আগুন ধরে গেছিল। তাই এই বিষয়গুলোতে সতর্কতা অবলম্বন করা একান্ত প্রয়োজন।

মোটামুটি যারা ঢাকা শহরে থাকে এই ব‍্যাপার গুলো তাদের কাছে একেবারে সাধারণ। হ‍্যা ভাই আপনার কথা ঠিক। এটা আমাদের মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের প্রাণঘাতি ঘটতে পারে। কিন্তু এগুলো দেখার জন্য যথাযথ কতৃপক্ষ থেকেও যেন নেই।

পুরান ঢাকার গুলিস্তান ও নবাবপুরের মতো এলাকাগুলোতে বিদ্যুতের তারের এলোমেলো ব্যবস্থা সত্যিই ভয়ানক। এগুলো শুধু ঝুঁকিপূর্ণই নয়, প্রাণঘাতী দুর্ঘটনারও কারণ হতে পারে। উন্নত দেশ গঠনে এমন অবকাঠামো মোটেও কাম্য নয়। ঘনবসতিপূর্ণ এই শহরগুলিতে কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া। নইলে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের বিপদ ঘটতে পারে। শুধু পুরান ঢাকা নয়, সারা দেশেই এমন অব্যবস্থাপনা দুর্ভাগ্যজনক। বর্ষাকালে কারেন্টের তারে আগুন ধরা বা অন্যান্য দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটে। এগুলো রোধ করতে সতর্কতা ও সঠিক ব্যবস্থাপনা একান্ত প্রয়োজন। নইলে আগামীতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি।