কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।
আমরা জন্মগ্রহণ করি একা মৃত্যুবরণ করবো একা। মাঝখানে শুধু কিছুটা সময় যাত্রাপালা চলতে থাকে আমাদের জীবনে, আর সেই যাত্রাপালায় আমরাও একজন অভিনেতা বা অভিনেত্রী। প্রত্যেকটা মানুষ যখন জন্মগ্রহণ করে তাকে ভগবান একটা চরিত্র নির্দিষ্ট করে দিয়ে পাঠিয়ে দেয় এই পৃথিবীতে। আর সেই চরিত্র যতটা পর্যন্ত ভগবান লিখে রাখে ততটা পর্যন্তই আমাদের অভিনয় করার সুযোগ থাকে। সেটা যদি হয় কারোর হঠাৎ মৃত্যু তো সেই পর্যন্তই থাকে আমাদের চরিত্র এবং শেষ বিরতিটা থাকে সেই হঠাৎ ভাবে। আবার কিছু কিছু মানুষের থাকে দীর্ঘ সময়ের অভিনয় এবং তার মধ্যে থাকে বিভিন্ন চরিত্র যেমন শৈশব, কৈশোর, বাল্যকালের এবং তারপর বিবাহের পর আরেকটা চরিত্র স্বামী বা স্ত্রী, তারপর বাবা-মা তারপর বার্ধক্যের চরিত্র। এর মধ্যেও প্রতি ক্ষণে ক্ষণে বিভিন্ন চরিত্র আমাদের পরিবর্তন হতেই থাকে। আর তার মধ্যেও থাকে ভালো সময় আর খারাপ সময়ের ওঠা পড়া। মনে আঘাত দেওয়া এছাড়াও মনে আঘাত পাওয়ার সময়। আমরা যদি প্রত্যেকটা মানুষের জীবন কাহিনী নিয়ে একটি সিনেমা তৈরি করি তাহলে দেখা যাবে তিন ঘন্টাতেও শেষ করা যাবে না। কত মানুষজন কত আত্মীয়-স্বজন সারা জীবন আমাদের বিভিন্ন চরিত্রের সম্মুখীন হতে হয়।
আমরা জীবনে বেঁচে থাকাকালীন অনেক মানুষের সাথে ইমোশনালি জড়িয়ে পড়ি আবার সম্পর্কের বাঁধনেও জড়িয়ে থাকে। কিন্তু এই সব সম্পর্ক সবকিছুই আমাদের জীবিত থাকাকালীন, মৃত্যুতেই সব শেষ। যে মানুষটি জীবিত থাকাকালীন প্রতিটা মুহূর্তে প্রতিটা সেকেন্ড আমাদের সঙ্গে সময় কাটাতে চাইতো মৃত্যুর পরে সেই মানুষটি আমাদের আত্মা বা ভূতের ভয়ে ঘরে লাইট জ্বালিয়ে ঘুমাবে। অনেকে আবার খুব ভয়ে তান্ত্রিকের কাছে ছুটবে। যদি কখনো সেই প্রিয় মৃত মানুষের স্বপ্ন বার বার আসে তাহলে স্বপ্ন না দেখার জন্য বিভিন্ন তাবিজ কবজ ধারণ করবে রাতে যেন স্বপ্ন বার বার না আসে। আমাদের জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্তই আমাদের যতসব আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব এমনকি প্রিয় মানুষটি সঙ্গ দেয়। কিন্তু যেই মুহূর্তে আমাদের মৃত্যু ঘটবে পর মুহূর্তেই সব কেমন যেন আমাদের পর হয়ে যায়। কিছু আত্মীয়-স্বজন যারা আমাদের অনেক বেশি ভালোবাসতো তারা হয়তো কান্নায় ঢলে পড়বে, আবার কিছু আত্মীয়-স্বজন আছে যারা আমাদের অন্তিম যাত্রার ব্যবস্থা করবে। মৃত্যুর মুখে আমরা কি দোষ পেলাম, কিভাবে যাত্রা করতে হবে, কিভাবে আমাদের মৃতদেহকে দাহ করা হবে বা কবর দেওয়া হবে সে ব্যাপারেই বেশি ব্যস্ততা লেগে থাকবে।
কোন শ্মশানে অথবা কোন কবরস্থানে আমাদের অন্তিম কাজ করা হবে সে ব্যাপারেও কিছু মানুষের চিন্তার শেষ থাকবে না। কাছাকাছি যেটা থাকবে সেটাতেই অন্তিম কাজ খুব তাড়াতাড়ি শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা থাকবে। আমাদের মৃত্যুর পর মুহূর্তেই কিছু মানুষ তাদের পরবর্তী জীবনের কাজ করার চিন্তাভাবনা শুরু করে দেবে। আত্মীয়-স্বজনের মনে হয়তো কিছুদিন কষ্ট থাকলেও আমাদের জন্য কারোর কোন কাজ থেমে থাকবে না। মৃত্যুর কিছুদিন পরই আত্মীয়-স্বজনের মন থেকে এমন ভাবে মুছে যাবে আমাদের কথা যেন আমরা কখনো ছিলামই না, আমাদের কোন অস্তিত্বই ছিল না। যে মানুষটি একান্তই আপন ছিল এবং প্রিয়জন ছিল সে কয়েকটা দিন খুব কান্নাকাটি করে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দিয়ে শোক পালন করলেও কিছুদিন পর আবার স্বাভাবিক জীবনযাপন করা শুরু করে দেবে। প্রিয় মানুষটির হয় তো হঠাৎ হঠাৎ আমাদের কথা মনে পড়লেও পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নেবে। এইভাবেই চলতে চলতে একদিন আমাদের কথা মনে করে প্রিয়জনের কষ্ট হওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। সবাই বাস্তবটা মেনে নেবে এবং নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে।
জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্তই বিভিন্ন মানুষের আমরা সঙ্গ পাই। মৃত্যুর পর কোনো মানুষ ভুলেও আমাদের মনে করতে চাইবে না। কিছু মানুষ তো এমনও কথা বলে বসবে যে, 'মৃত মানুষের কথা মনে করলে তারা নাকি ফিরে আসতে পারে, তাই মনে করা যাবে না'। মৃত্যুর পর আমাদের সাথে কি ঘটে থাকে সেটা হয়তো আমাদের জানা নেই। কোথায় যায় আমাদের আত্মা এমন সুন্দর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে? তবে মৃত্যুর পরক্ষণ এই যে আমাদেরকে আমাদের পরিবার ব্যস্ত হয়ে পড়বে, আমাদের শরীরকে শেষ করে দিতে সেটা একদমই অস্বীকার করার মতন নয়। আমরা একাই জন্মেছি একাই মৃত্যুবরণ করবো। তাই পৃথিবীতে যেটুকু সময় আমরা মনুষ্য রূপে রয়েছি সেটুকুই আমাদের সুন্দর সময়। তাই এই সুন্দর সময়কে সব সময় সুন্দর করে তুলতে হবে এবং প্রতিমুহূর্তে সুন্দর করে বাঁচার চেষ্টা করতে হবে। মৃত্যুর পর প্রত্যেকটা মানুষের জায়গা একটাই তাই কখনো নিজেকে নিয়ে অহংকার করা উচিত নয়। আমার আমার করে সারা জীবন কোন জিনিসকে ধরে রাখলেও মৃত্যুর পর সেই জিনিসটা এই পৃথিবীতেই ফেলে রেখে খালি হাতে এমনকি বস্ত্র ছাড়া যেতে হবে। তাই হিংসা না করে মনুষত্ব বজায় রেখে সকলে একসাথে সুন্দর করে বাঁচার চেষ্টা করতে হবে।
আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।
Downvoting a post can decrease pending rewards and make it less visible. Common reasons:
Submit