ভ্রমণ পোস্ট: নানার বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ইট ভাটায় ভ্রমণ

in hive-129948 •  11 days ago 

আমি @riyadx2 বাংলাদেশ থেকে
বুধবার, ১৮ ই জুন ২০২৫ ইং

আসসালামুয়ালাইকুম, এবং হিন্দু ভাইদের কে আদাব।আমার বাংলা ব্লগ এর সবাই কেমন আছেন, আশা করি প্রত্যেকে অনেক বেশি ভালো আছেন। আমি ও আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। প্রতিদিনের ন্যায় আজকে আপনাদের সাথে ইট ভাটার মধ্যে ঘোরাঘুরি করার কিছু মুহূর্ত শেয়ার করবো । আশাকরি আপনাদের প্রত্যেকের অনেক বেশি ভালো লাগবে।তো চলুন এবার শুরু করা যাক।


FunPic_20250618_203810869.jpg

কিছু দিন আগে এক অবসরে নানা বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম। গ্রামবাংলার সেই চিরচেনা পরিবেশ, খোলা আকাশ, সবুজ ধানক্ষেত আর পাখির কুজন যেন মনটা একেবারে হালকা করে দিলো। কিন্তু এই সফরের এক বিশেষ আকর্ষণ ছিল ইটভাটায় যাওয়া। নানা বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে ছিল ইটভাটা। সকালবেলা আমরা হাঁটতে হাঁটতে সেখানে রওনা দিলাম।ইটভাটায় পৌঁছে চোখে পড়লো মাটির তৈরি বিশাল বিশাল পাহাড়। মনে হচ্ছিল যেন ছোট ছোট টিলার সারি দাঁড়িয়ে আছে সারিবদ্ধভাবে। এগুলো আসলে ইট তৈরির জন্য কাটা মাটির স্তূপ। তাদের উপর উঠে চারপাশে তাকাতেই দেখা গেল দূরে ধোঁয়া উঠছে, লালচে আগুনে পুড়ে ইট তৈরি হচ্ছে। ইটভাটার সেই কাঁচামাটির গন্ধ, আগুনের তাপ, শ্রমিকদের কর্মচাঞ্চল্য সব মিলিয়ে একটা আলাদা অনুভব তৈরি করেছিল।

IMG-20250618-WA0000.jpg

মাটির পাহাড়ে উঠতে প্রথমে একটু ভয় লাগছিল, পা পিছলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও ছিল। তবে সাহস করে যখন উঠে পড়লাম, তখন চারপাশের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারিনি। সূর্যের আলো পড়ে লাল মাটির টিলাগুলো যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। দূরে দেখা যাচ্ছিল ইট সাজানো, আর কিছু লোক সেই ইট গুছিয়ে রাখছেন আগুনে পোড়ানোর জন্য।শ্রমিকরা ব্যস্ত ছিলেন নিজ নিজ কাজে। কেউ মাটি কাটছে, কেউ ইটের ছাঁচে মাটি বসাচ্ছে, আবার কেউ ইট পোড়ানোর কাজে নিয়োজিত। ওদের পরিশ্রম দেখে সত্যিই শ্রদ্ধা জাগে। কত কঠোর পরিশ্রমের ফলে আমরা একটা ইটের ঘর পেয়ে থাকি এটা সেদিন চোখে দেখা গেল।

IMG-20250618-WA0003.jpg

আমরা প্রায় এক ঘণ্টার মতো ছিলাম সেখানে। মাটির পাহাড় থেকে নামার সময় পায়ে কাদা লেগে গিয়েছিল, কিন্তু সেটা ছিল মজার অভিজ্ঞতা। ইটভাটার ধারে একটা ছোট পুকুরও ছিল, সেখানে পা ধুয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে আমরা ফিরে আসি।ইটভাটার চারপাশটা ছিল বেশ বিস্তৃত। অনেকটা উন্মুক্ত মাঠের মতো জায়গা, যেখানে চারপাশে শুধু মাটি আর ইটের স্তূপ। আমরা হেঁটে হেঁটে পুরো এলাকা ঘুরে দেখলাম। কোথাও নতুন করে মাটি এনে রাখা হয়েছে, কোথাও আবার আগের থেকে বানানো ইট রোদে শুকানো হচ্ছে। ইট শুকানোর সেই প্রক্রিয়া, যেভাবে মাটির ইটগুলো সারি সারি করে বিছানো হয় সব কিছুই ছিল যেন চোখের সামনে জীবন্ত কোনো পাঠ্যবইয়ের চিত্র।

IMG-20250618-WA0002.jpg

সেই ভাটায় কিছু ছোট ছোট ছেলেমেয়েকেও দেখা গেল, যারা তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে এসেছে। তারা ইটের স্তূপের পাশে খেলাধুলা করছিল। একজন ছোট্ট ছেলে আমাদের দেখে হাত নাড়তে নাড়তে বলল, আপনারা শহর থেকে এসেছেন? তার সরল প্রশ্নে আমরা হেসে ফেললাম। ওদের এই সরল জীবনযাপন, প্রকৃতির মাঝে বেড়ে ওঠা সব কিছুতে একধরনের নির্মলতা আছে যা শহরের কোলাহলে হারিয়ে যায়।এক সময় ধোঁয়া ওঠা চিমনির দিকে তাকিয়ে বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম। আগুনের ভেতরে ইটগুলো পোড়ানো হচ্ছে, আর সেই আগুনের আলো মাঝেমধ্যে বাইরে এসে চিমনির ধোঁয়ার ফাঁকে এক রকম লালচে আভা তৈরি করছিল। এটা যেন প্রকৃতির আর মানুষের পরিশ্রমের এক অভিন্ন চিত্র।

IMG-20250618-WA0001.jpg

ইটভাটার চারপাশে কিছু গাছগাছালিও ছিল। এক পাশে একটা কাঁঠাল গাছ, তার নিচে ছায়া। আমরা কিছু সময় সেখানে বসে বিশ্রাম নিলাম। বাতাসে ছিল মাটির ঘ্রাণ, ধোঁয়ার সামান্য ঝাঁঝ আর কিছুটা গরম ভাব। তবু সেই পরিবেশে বসে থাকতে খুব ভালো লাগছিল। প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার যে এক অন্য রকম শান্তি, সেটা অনুভব করছিলাম।ফিরে আসার সময় বারবার পিছনে ফিরে তাকাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিল, এমন জায়গা থেকে খুব তাড়াতাড়ি চলে আসা ঠিক হচ্ছে না। ইটভাটার সেই লাল মাটির টিলাগুলো, শ্রমিকদের ব্যস্ততা, ছোট ছেলেমেয়েদের খেলা, আর প্রকৃতির সেই সহজ রূপ সবকিছুই মনে এক গভীর ছাপ রেখে গেছে

IMG-20250618-WA0004.jpg

ছুটির দিনের এমন অভিজ্ঞতা খুব বেশি দিন পরে এলেও, সেটা মন থেকে সহজে মোছা যাবে না।সেই ভ্রমণটি ছিল একেবারে ব্যতিক্রমধর্মী। ইটভাটার কর্মজীবন, প্রকৃতির রূঢ় অথচ বাস্তব সৌন্দর্য, আর মাটির পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে মুক্ত বাতাসে দম নেওয়ার স্বাদ সবকিছুই মনে গেঁথে আছে। ছুটির দিনের এমন ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতা সত্যিই স্মরণীয় হয়ে থাকবে বহুদিন।

সবাই কে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

ক্যামেরা পরিচিতি
DeviceiPhone 11
Camera11+11 MP
CountyBangladesh
LocationRangpur, Bangladesh

2FFvzA2zeqoVJ2SVhDmmumdPfnVEcahMce9nMwwksSDdRvZ6f4GKSwLn3BBFmPFifbbr21AhPTJ7XiTPJGbzxXNzpL3AeDnWebvp5DxFE241B8HGEVAqqCDY5m5Sn.png

Vote@bangla.witness as witness

54TLbcUcnRm3sWQK3HKkuAMedF1JSX7yKgEqYjnyTKPwrcNLMcZnLnFrW5PDaQKxbWWqwrRezSAe39S7RTiEk7NCzgzD1reVavwZGUMbjasjujy1CQqSedvtuVGKXod3vcdSqiXp2.png

Or

Set@rme as your proxy

2r8F9rTBenJQfQgENfxADE6EVYabczqmSF5KeWefV5WL9WEX4nZPQpSChVhr5YUqUeT6qhYr1L6PMHKqtRnepY2a8e1tqsDtWfr4V8KDGvJtydqvz4V68PMUyu9EWpez2.png


আমার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

1728830339945~3.jpg

আমি একজন বাংলাদেশের নাগরিক। আমি বাংলায় কথা বলতে ভালোবাসি এবং আমার মাতৃভাষা বাংলা। আমি একজন ছাত্র, আমি আসন্ন এইচএসসি সমমান পরীক্ষা শেষ করে দিনাজপুর সরকারি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছি। আমি পড়ালেখা করার পাশাপাশি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করি। আমি গত ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হই। এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি। আমার বাড়ি বাংলাদেশের রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের তিন নং ওয়ার্ড।আমি ফটোগ্রাফী ও ভ্রমণ করতে অনেক ভালোবাসি।
Authors get paid when people like you upvote their post.
If you enjoyed what you read here, create your account today and start earning FREE STEEM!
Sort Order:  

ইট ভাটার বেশ ভালোই ভ্রমণ করেছেন।আসলে গ্রামের মানুষ প্রকৃতির মাঝে নিজেকে সব সময় বিলিয়ে দেয়।তবে আপনার ইট ভাটার ফটোগ্রাফি গুলো দেখে অনেক ভালো লাগলো। পাশে সবুজের সমারোহ দেখে আর একটু বেশি ভালো লাগলো। ধন্যবাদ ভাই সুন্দর কাটানো মুহূর্ত আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।