ট্রেন ভ্রমণে নতুন অভিজ্ঞতার শিকার

আসসালামুয়ালাইকুম, এবং হিন্দু ভাইদের কে আদাব।আমার বাংলা ব্লগ এর সবাই কেমন আছেন, আশা করি প্রত্যেকে অনেক বেশি ভালো আছেন। আমি ও আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। প্রতিদিনের ন্যায় আজকে আপনাদের সাথে ট্রেন ভ্রমণে নতুন অভিজ্ঞতার গল্প শেয়ার করবো । আশাকরি আপনাদের প্রত্যেকের অনেক বেশি ভালো লাগবে।তো চলুন এবার শুরু করা যাক।

প্ল্যান ছিল না, প্রস্তুতি ছিল না, শুধুই ছিল ভেতর থেকে আসা একটা অদ্ভুত আকর্ষণ চলো কোথাও ঘুরে আসি সেই প্রাণ প্রিয় দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেকে।ঘড়ির কাঁটা তখন সকাল আটটা । আমি আর আমার দুই বন্ধু হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলাম, দিনাজপুর যাব। কিন্তু সমস্যা একটাই আমাদের কাছে ট্রেনের কোনো টিকেট নেই। তবুও আমরা দুজন শ্যামপুর রেলওয়ে স্টেশনে হাজির হলাম। ভেবেছিলাম, যদি গার্ড সাহেব ভালো থাকেন, তাহলে সামলে নিবো। অথবা ট্রেনের মাঝেই টিকেট কেটে নেবো।দিনাজপুরগামী বুড়িমারী কমিউটার ট্রেন যখন প্ল্যাটফর্মে এলো, তখন প্ল্যাটফর্মে একটা উত্তেজনার ঢেউ বয়ে গেলো।

টিকেট না থাকলেও আমরা সেই ঢেউয়ের সাথে নিজেদের ভাসিয়ে দিয়েছিলাম। একটা ভরপুর কামরার কোণে কোনোরকমে জায়গা করে নিলাম। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে চোখে পড়লো সবুজ মাঠ, গ্রামের ঘর, বাচ্চাদের হাসি আর দিগন্ত পেরিয়ে যাওয়া ধানের মাঠ। ভ্রমণের আনন্দে তখন টিকেটের চিন্তাও ভুলে গিয়েছিলাম।দিনাজপুর পৌঁছাতে প্রায় চার ঘণ্টা লেগেছিল। শহরটা যেন খুব চেনা অথচ নতুন। আমাদের সেই প্রাণ প্রিয় ক্যাম্পাস দিনাজপুর সরকারি কলেজ যেন আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। আমরা সারাদিন কলেজের মধ্যে আড্ডা দিলাম এবং বেশ কয়েকটি ক্লাশ ও করেছিলাম। পা ক্লান্ত হলেও মন ভরে গিয়েছিল।

কিন্তু যতটা আনন্দে দিন কেটেছিল, ফিরে আসার সময় ঠিক ততটাই নাটকীয় ছিল। সন্ধ্যায় স্টেশনে এসে দেখি যে ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। তাড়াহুড়ো করে উঠে পড়লাম, এবারো কোনো টিকেট না কেটে। ভেবেছিলাম, গার্ডকে বুঝিয়ে বলবো, টাকা দিয়ে ফেলবো, কোনো সমস্যা হবে না।কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, ফিরে আসার সময়ই প্রথম ধরা পড়ে গেলাম টিকেট মাস্টারের কাছে। তিনি খুব কড়া স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা টিকেট কই? আমরা প্রথমে একটু ঘাবড়ে গেলেও শান্তভাবে বললাম, ভাই, আমরা আসলে ঘুরতে এসেছিলাম, হুট করে সিদ্ধান্ত নিই, টিকেট কেনা হয়নি, দয়া করে একটা ব্যবস্থা করে দিন।

তিনি প্রথমে রেগে গেলেও পরে হয়তো আমাদের মুখ দেখে বুঝলেন, ইচ্ছে করে করিনি। কিছু টাকা জরিমানা করে আমাদের বসার জায়গা দিলেন। সেই মুহূর্তে মনে হচ্ছিল, যেন একটা রোমাঞ্চকর সিনেমার ভেতর ঢুকে পড়েছি।সেই অভিজ্ঞতা আমাদেরকে শুধু একটা স্মরণীয় ট্রিপই উপহার দেয়নি, বরং শিখিয়েছে, পরিকল্পনা ছাড়া ভ্রমণের মধ্যে যেমন স্বাধীনতা থাকে, ঠিক তেমন ঝুঁকিও লুকিয়ে থাকে। দিনাজপুরের সৌন্দর্য যেমন মনে থাকবে চিরকাল, তেমনি সেই টিকেট মাস্টারের কড়া চোখ আর আমাদের লজ্জার মুহূর্তটাও ভোলা যাবে না।

আজও যখন বন্ধুরা মিলে বসি, সেই ভ্রমণের গল্প উঠে আসে হাসি ঠাট্টার মাঝে। আমরা বলি, টিকেট ছাড়া যারা ঘুরতে যায়, তাদের একবার না একবার ধরা পড়তেই হয়। কিন্তু তবুও, ট্রেনের জানালার বাইরে পিছু ছুটে আসা সবুজ পৃথিবীর সেই মুহূর্তগুলো তার দাম কোনো টিকেটে মাপা যায় না।ভ্রমণটা যেমনই হোক, অভিজ্ঞতাটা রয়ে যায় চিরন্তন। আসলে এরকম অভিজ্ঞতা পাওয়া ও একধরনের শিক্ষা। আমার কাছে এটা ছিল একটি নতুন অভিজ্ঞতা।এর মাধ্যমে অনেক কিছু বিষয় জানতে পারছি এবং শিখতে পারছি। এরকম অভিজ্ঞতার শিকার হয়তো আপনারা অনেকেই হয়েছেন। যারা যারা এরকম অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলেন তারা অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন আমাকে।

সবাই কে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

আমি একজন বাংলাদেশের নাগরিক। আমি বাংলায় কথা বলতে ভালোবাসি এবং আমার মাতৃভাষা বাংলা। আমি একজন ছাত্র, আমি আসন্ন এইচএসসি সমমান পরীক্ষা শেষ করে দিনাজপুর সরকারি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছি। আমি পড়ালেখা করার পাশাপাশি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করি। আমি গত ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হই। এই প্লাটফর্মের মধ্যে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি। আমার বাড়ি বাংলাদেশের রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের তিন নং ওয়ার্ড।আমি ফটোগ্রাফী ও ভ্রমণ করতে অনেক ভালোবাসি।